
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল যেন এখন চিকিৎসার বদলে অনিয়মের অভয়ারণ্য। জনবল সংকটের পাশাপাশি বহিঃবিভাগে এখন রোগী দেখছেন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আর সরকারি দায়িত্ব ফেলে চিকিৎসকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ব্যক্তিগত চেম্বার ও নিজ মালিকানাধীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহিঃবিভাগের ১১০ নম্বর কক্ষে রোগী দেখছিলেন ১৮-২০ বছর বয়সী এক যুবক, যিনি একটি হারবাল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। অথচ রোস্টার অনুযায়ী এ কক্ষে দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. সিফাত মাহমুদ ও দুইজন ম্যাটস শিক্ষার্থী।
জিজ্ঞেস করলে ডা. সিফাত বলেন, “রোগীর চাপ সামলাতে তাকে বসতে দিয়েছিলাম, এটা ভুল হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ডা. সিফাত সরকারি দায়িত্ব ফেলে ট্রেড লাইসেন্সে পরিচালিত ‘মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ব্যস্ত থাকেন।
চিকিৎসা আইন অনুযায়ী, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না থাকলেও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়মিত তাদের চিকিৎসকদের পাশে বসে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।
জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সঙ্গেও ঔষধ কোম্পানির লোকদের সুপারিশ করতে দেখা গেছে। তারা ডাক্তারদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখছেন এবং নিজেদের ঔষধ ব্যবহারের অনুরোধ জানাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, “বহিঃবিভাগ ও ইমারজেন্সিতে প্রায়শই চিকিৎসা পত্র দেয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এতে রোগীরা ভুল চিকিৎসা পাচ্ছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের খাবার সরবরাহও করে থাকেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আফিফা বলেন, “বহিঃবিভাগে প্রতিনিধিদের পাওয়া গেলে সতর্ক করা হয়। বর্তমানে তাদের দেখা যায় না। ভবিষ্যতে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফরিদপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার গত ১৫ মে দুপুরে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, “রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২২ কেজির স্থলে ১৫ কেজি ২০০ গ্রাম মাংস সরবরাহ করা হয়েছে। দৈনিক দুইবার ৩৫০ গ্রাম করে ৭০০ গ্রাম দুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। শুক্রবারে খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র বিশেষ দিনে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, হিসাবরক্ষক ছুটিতে থাকায় লিলেন ও পোশাক ধোলাইয়ের টেন্ডার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। এসব তথ্য ও কাগজ বিশ্লেষণ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জিয়াউল আহসান বলেন, “দুদক রান্নাঘরের খাবার, উপস্থিতি ও টেন্ডার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে। হিসাবরক্ষক না থাকায় কাগজ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে শনিবারের মধ্যে তা জমা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত ৩১ ডিসেম্বর সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দুদক রোগীদের খাবার কম দেওয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল।
মুমু