
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত কাজ করার ফলে মস্তিষ্কের গঠনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার চুং-আং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণা। গবেষকরা জানান, প্রতি সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ধূসর পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নির্বাহী কার্যকলাপ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত।
গবেষণাটিতে ১১০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জন নিয়মিত ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, আর বাকি ৭৮ জন মানক কর্মঘণ্টা অনুসরণ করেন। নিউরোইমেজিং কৌশল-যেমন ভক্সেল-ভিত্তিক মরফোমেট্রি এবং অ্যাটলাস-ভিত্তিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে গবেষকরা এই গঠনগত পার্থক্য শনাক্ত করেন।
বর্ধিত কর্মঘণ্টা যাদের, তাদের মস্তিষ্কের মধ্য ফ্রন্টাল গাইরাসে ধূসর পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা মনোযোগ, কাজের স্মৃতি এবং ভাষা প্রক্রিয়াকরণের মতো উচ্চতর মানসিক কাজের সঙ্গে জড়িত। একইভাবে, আবেগগত প্রসেসিং ও আত্মজ্ঞান সংশ্লিষ্ট ইনসুলা অঞ্চলেও পরিবর্তন দেখা যায়।
গবেষকরা জানান, “এই পরিবর্তনগুলোই অতিরিক্ত কর্মঘণ্টায় কর্মরত ব্যক্তিদের ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং বার্নআউটের মতো উপসর্গের একটি জৈবিক ভিত্তি হতে পারে।”
গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক জুন-ইউল চোই বলেন, এই পরিবর্তনগুলো পরিবেশগত চাপ কমালে আংশিকভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজ কমাতে নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার ওপর গবেষণাটি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। যদিও অতিরিক্ত কাজের মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত প্রভাব নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এর নিউরোলজিক্যাল প্রভাব বা মস্তিষ্কে শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়ে গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম। তাই গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত কাজকে শুধুমাত্র কর্মদায়িত্ব না দেখে স্বাস্থ্যগত সমস্যার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি।
এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কাজ হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে জড়িত। এবার পাওয়া গেল মস্তিষ্কের উপর তার সরাসরি প্রভাবের শারীরিক প্রমাণ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত কাজ প্রতি বছর ৮ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ- প্রধানত স্ট্রোক ও হৃদরোগজনিত কারণে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, মস্তিষ্কের যেসব অংশে ধূসর পদার্থের পরিমাণ বেড়েছে, তা প্রকৃত বিকাশ নয় বরং চাপজনিত সংযোগ পরিবর্তন বা স্নায়বিক ফোলাভাবের লক্ষণও হতে পারে। তারা বলেন, “ফলাফলগুলো সাবধানতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা উচিত, তবে এটি অতিরিক্ত কাজ এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা।”
সূত্র: https://shorturl.at/hWMFS
মিরাজ খান