ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

তথ্যপ্রযুক্তির স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে ধুলো মাখা শৈশব!

শেখ ফয়সাল আহমেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৩, ৩ জুলাই ২০২৫

তথ্যপ্রযুক্তির স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে ধুলো মাখা শৈশব!

শৈশব মানেই ছিল দুরন্তপনা, অবাধে ছুটে চলা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলার পর ধুলো মাখা জামাকাপড় নিয়ে মায়ের বকুনি খাওয়া। বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় গড়াগড়ি দিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা ছিল সেই সোনালী দিনের রঙিন গল্প। সেই সাথে ছিল বাঙালির শতবর্ষের নানা সংস্কৃতি, ইচিং-বিচিং, হা-ডু-ডু, কাবাডি, কাগজের নৌকা ভাসানো কিংবা সুপারি পাতার গাড়ি নিয়ে খেলা।

কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে সেই সোনালী শৈশব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর শিশু-কিশোররা মাঠে যেতে চায় না, চোখ আটকে থাকে মোবাইল ফোন আর কম্পিউটার স্ক্রিনে।

২০০০ সালের পর দেশে প্রযুক্তির জোয়ার বয়ে যায়। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, পড়াশোনা সবখানেই আধুনিক বিজ্ঞানের স্পর্শ। কিন্তু এই প্রযুক্তির প্রভাবে শৈশবের মাটির গন্ধ যেন আজ শুধু স্মৃতির ক্যানভাসে আটকে আছে।

মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আহ! কী সুন্দর ছিল আমাদের শৈশব। স্কুল থেকে ফিরে পুকুরে সাঁতার কাটা, বৃষ্টির কাদায় লাফালাফি, বিকেল হলেই মাঠজুড়ে দৌড়াদৌড়ি। অথচ এখনকার ছেলেমেয়েরা এসব কিছুই জানে না। আমার নাতিদের খাওয়াতে পর্যন্ত মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে দিতে হয়। ছয় বছর বয়সেই নাতির চোখে চশমা উঠেছে।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “মা-বাবারা যদি সন্তানদের প্রকৃতির কাছে নিয়ে যায়, তাহলে ওদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা বাড়বে। এ দায়িত্ব বড়দের।”

মিরপুর শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুলের ছাত্রী মুনমুনের মা মাহিয়া বেগম বলেন, “আমার মেয়ে ক্লাস টুতে পড়ে। বাচ্চাটা মোবাইল ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। প্রথমে বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মোবাইলের কার্টুন দেখে ও অদ্ভুত আচরণ করছে। ঘুমের ঘোরে হাত-পা ছোড়ে। গ্রাম থেকে ওর দাদু এসে বারবার বলে, মেয়েকে প্রকৃতির মাঝে নিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতির কোলে বড় হলে ওর শরীর-মন দুটোই ভালো থাকবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না হলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। অনেক শিশু চোখের সমস্যা, অস্বাভাবিক আচরণ, একাকীত্ব ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।

তাদের মতে, “বিজ্ঞানের সব আবিষ্কারেই সুফল-কুফল দুইই থাকে। যখন আমরা প্রযুক্তিতে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে যাই, তখনই সেটি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।”

মিমিয়া

×