
বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে যে কোন বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা
আর ভালবাসার এক অনুভব জাগে মানুষটি কতভাবে
অবদান রেখে যান সন্তানের জন্য , যার চুলচেরা হিসাব
করে কেউ বের করতে পারবেন না। বাবার কাঁধটা কি অন্য সবার চেয়ে বেশি চওড়া? তা না হলে কি করে সমাজ সংসারের এত দায়ভার অবলীলায় বয়ে বেড়ান বাবা।বাবার পা কি অন্য সবার চেয়ে অনে বেশি দ্রুত চলে?নইলে এতটা পথ এত অল্প সময়ে কি করে এত শক্ত করে সব।কিছু আগলে রাখেন বাবা। আর বাবার ছায়া ... ?
সেটাও শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়। বড়
যদি না হবে তবে জীবনের এত উত্তাপ থেকে কি করে
সন্তানকে সামলে রাখেন বাবা আর বাবার চোখ ? সেটাও
কি দেখতে পায় কল্পনার অতীত কোন দূরত্ব। তা না হলে
কি করে সন্তানের ভবিষ্যত ভাবনায় শঙ্কিত হন বাবা।
বাবা নিয়ে সব সন্তানের অনুভূতিটা সমান হয় না। আবার
জীবনের নানা বাঁকে সব বাবাও হয়ত পারেন না সন্তানের
প্রতি তাদের আরেকটু একইভাবে প্রকাশ করতে। তাই
কখনও কখনও বাবা নামের সম্পর্কটার বিশালত্ব ভুলে যাই আমরা। আমাদের জনক হয়ে যান জন্মদাতা।
ব্যক্তি
স্বাতন্ত্র্যের ভাবনায় বাবার ভূমিকাকেও খাটো মনে হয়।
তবুও বাবা কিন্তু সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করে যান
তার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
প্রকাশভঙ্গি যাই হোক, সন্তানের জন্য পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে চেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। তাই বাবা যাদের বন্ধু তারাই জানে কি করে নিজের সব ভাবনাকে বাবার হাতে সঁপে দিয়ে হাল্কা হতে হয়। কি করে বাবার নির্ভরতার ছায়ায় থেকে , তার চোখে দেখা সুন্দর
ভবিষ্যতটাকে নিজের করে নিতে হয়। অন্যদিকে বাবা
যাদের কাছে দূরতম গ্রহের বাসিন্দা , তারা শত অর্জনের
মাঝেও নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত হন অমোঘ এক প্রাপ্তি
থেকে।
বাবার সঙ্গে সন্তানের যে সহজ স্বাভাবিক
সম্পর্ক তাতে দু’ জনেরই কিছু না কিছু করার ব্যাপার
রয়েছে। বাবা হয়ত সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ক্লান্ত
শরীর আর মন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। সে ক্ষেত্রে
ভালবাসার বারতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সন্তানকেই।
আবার সন্তান যখন মনের মাঝে ঘরবসতি গড়ে দিনে দিনে নিভৃতচারী হয়ে উঠছে তখন তার ভাবনাগুলো ভাগাভাগি করতে সামনে এগোতে হবে বাবাকে। মনে রাখবেন ,সন্তান যত বড়ই হোক না কেন তার অভিমান আর অবহেলার পরিমাণ যত বিশালই হোক বাবার ¯ সব সময় তার জন্য এক পরম আশ্রয়। বেঁচে থাকার আনন্দে, কষ্টের তীব্রতায়,কঠিন সমস্যায় বাবাই হয়ে ওঠেন বিপদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা সহায়।
অন্যদিকে সন্তান হিসেবে আপনাকে ভাবতে হবে বাবার কথা। তার আবেগ অনুভূতি আর পরিণত বয়সের চাওয়া পাওয়াগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। যে বয়সে স্কুল - কলেজে নতুন নতুন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে সময়গুলো বেশ জমে উঠেছে সে সময়টাতে ভুলে যাওয়া চলবে না পুরনো বন্ধুকে। বরং পুরনো দিনের কথা মনে রেখে নিজের জীবনের এই খোলস ছাড়াবার মুহূর্তে যদি বাবাকেও সঙ্গী হিসেবে নেয়া যায় তাহলে বরং চেনা বন্ধুরাও নতুন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে
জীবনের কঠিন পথে হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকিটা কমে।
আবার যারা পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দিব্যি কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন আয় উপার্জন শুরু করেছেন তাদেরও সময় করে ভাবতে হবে বাবার কথা। অফিসের ব্যস্ততা আর নানা ঝামেলার মাত্রাটা যতই সীমা ছাড়িয়ে যাক না কেন বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের
জন্য হলেও তার পাশে বসতে হবে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে।
Jahan