ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধেয়ে আসছে বন্যা, নদী খনন অনিবার্য 

কাজী খলিলুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৫ মে ২০২৫

ধেয়ে আসছে বন্যা, নদী খনন অনিবার্য 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বন্যা অতিপরিচিত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরের মতো দেশে এবারও বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। বৈশাখ মাস থেকেই শুরু হয় কালবৈশাখি এবং এরপর অতিবৃষ্টিতে ভারি বন্যা। আসছে বর্ষা মৌসুম, মূল মৌসুম আসার আগেই সম্প্রতি দুই/তিন দিন যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ডুবে যায় দেশের কয়েক জেলার বিভিন্ন এলাকা। তাই জোর দিয়েই বলা যায়, আসন্ন বর্ষায় এবারও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা! দেশে প্রতি বছরই বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এরই মধ্যে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দেশের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। প্রতি বছরই বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অসংখ্য মানুষের ফসল, ঘরবাড়ি ও অতীব প্রয়োজনীয় মালামাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কোনো কোনো সময় প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে থাকে। ইতোমধ্যেই কিছু কিছু জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করেছেন আবহাওয়া অফিস।

দেশে প্রতিবছরই কম-বেশি সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে, মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ফলে অতিবৃষ্টির সময় উজানে থাকা ভারত বাঁধ খুলে দিলে এদেশে বন্যা দেখা দেয়। গত বছরও আমাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।

এছাড়া বর্ষা মৌসুমে দেশব্যাপী গ্রামাঞ্চলের খাল-বিলসহ বাড়ির আনাচে-কানাচে পানি আসে। দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্য হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে প্লাবন ভূমির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এতে কম পানিতেই বেশি বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি মানেই হাঁটু জলের সঙ্গে মিতালি, এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাছাড়া বিভিন্নভাবে নদীগুলো প্রকৃত রূপ হারানোর ফলে নাব্যতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়।

সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হলেও পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি, নদীগুলো অবৈধ দখল, নদী ভরাট এবং দূষিত বর্জ্যের কারণে বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হলে পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতির। এর থেকে উত্তরণে নদীতে নাব্য বজায় রাখার জন্য নদী খনন করা এবং সড়কপথের সঙ্গে সংযুক্ত সব নদী ও খালের ওপর পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করে পানিপ্রবাহ বজায় রাখা জরুরি। নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলা, নদী, খাল ও শহরের ড্রেনগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা।

এছাড়া নদ-নদী-খালের গভীরতা হ্রাসের ফলে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কৃত্রিম দুর্যোগের অংশ। কাজেই সরকারের নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসাবে নদী, নালা ও খালে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।

সজিব

×