
ছবি: সংগৃহীত
নদী আর মানুষের সম্পর্ক যেখানে জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে, সেখানে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাদুঘর নিঃসন্দেহে এক অভিনব প্রয়াস। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা গ্রামে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর, যা নদী, পানি ও পরিবেশকে ঘিরে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংগ্রাম এবং সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছে।
২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক এনজিও অ্যাকশন এইড এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা আভাস-এর সহযোগিতায় কলাপাড়া উপকূলীয় জনকল্যাণ সমিতি এই ব্যতিক্রমধর্মী জাদুঘরের সূচনা করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—নদীকেন্দ্রিক জীবনধারা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এবং পানি নিয়ে মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ ও তুলে ধরা।
জাদুঘরের সামনে চোখে পড়ে একটি ইটের দেওয়ালের মাঝে শেকলবদ্ধ একটি নৌকা—যা শুকিয়ে যাওয়া নদী ও মানুষের জীবনযুদ্ধের প্রতীক। ভেতরে রয়েছে প্রায় ৭০০ নদীর ইতিহাসবিষয়ক বই ও দলিল, ৯০টির বেশি নদীর পানির নমুনা, নদীসংক্রান্ত মানচিত্র, এবং বিলুপ্তপ্রায় মাছ ধরার উপকরণ।
বাংলাদেশের ৫৭টি আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীর ইতিহাস, গ্রামীণ লোকসংগীত, কাঁসা ও মাটির তৈজসপত্র, এমনকি নদীর ছবি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের আলোকচিত্র—সবই যেন দর্শনার্থীকে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতায় টেনে নেয়।
ছোট পরিসরের এই জাদুঘরটি বড় করে তোলে বাংলাদেশের জলজ সংস্কৃতি ও পানির প্রতি শ্রদ্ধা। দেশের ভ্রমণপিপাসু ও গবেষকদের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য, যেখানে নদী শুধু ইতিহাস নয়, বরং জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
আরমান