ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাইমেট সেন্টার 

জলবায়ু গবেষণার নতুন দ্বার উম্মোচন

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ১ অক্টোবর ২০২২

জলবায়ু গবেষণার নতুন দ্বার উম্মোচন

জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এসব ঝুঁকির প্রভাব নিয়ে হাতে কলমে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করেছে ক্লইমেট সেন্টার। যেখানে দেশের প্রধান জলবায়ু সমস্যা এবং প্রায় ১০০টি জলবায়ু অভিযোজন পদ্ধতি ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করা হবে।

শনিবার কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গবেষণা সহায়ক এ ক্লাইমেট সেন্টারের উদ্বোধন করেন। খ্রীষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) গাজীপুরের শ্রীপুরে সেন্টারের ১২ হেক্টর জমির উপর  এ জলবায়ু পার্কটি গড়ে তুলেছে। 

এখানে বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি পরিবেশগত অঞ্চল- উপকূল, খরা, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এবং হাওড় অঞ্চলকের  মডেল স্থাপন করা হয়েছে। যা মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগত সমাধানের উপায় প্রদর্শন করবে। যা জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং সর্বোপরি একটি জলবায়ু সহনশীল জনগোষ্ঠী তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশি বিদেশি গবেষকদের কাজ করার জন্য এই সেন্টারটি একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ একটি দেশ। তবে এসব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা খুবই কঠিন।

মন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষিখাত। যেখানে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষিতে যুক্ত। গ্রামে বসবাস করা ৭০% মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পড়বে। তাই সর্বপ্রথম কৃষিকে রক্ষা করার তাগিদ দেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিকে রক্ষা করে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে পারলে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে  মনে করেন তিনি।

সেন্টারটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন, প্রশমন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সংশ্লিষ্ট ৭০টিরও বেশি সময়োপযোগী এবং ব্যবহারোপযোগী প্রযুক্তি প্রদর্শনী রয়েছে। এছাড়াও ক্লাইমেট সেন্টারে থাকছে – ক্লাইমেট লার্নিং সেন্টার, ডিজিটাল থিয়েটার, এক্সিবিশন জোন, কনফারেন্স হল, লাইব্রেরি, রিসার্চ সেন্টার এবং চিল্ড্রেন লার্নিং জোন; যা জলবায়ু সহনশীল সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। ক্লাইমেট সেন্টারে গাইড ট্যুরের ব্যবস্থা থাকছে।

এ  জলবায়ু কেন্দ্র বাংলাদেশে প্রথম এমন গবেষণার একটি কেন্দ্র। যেটি জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, এনজিও কর্মী, সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য শিক্ষার একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে। এই কেন্দ্রটি বিভিন্ন জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সম-সাময়িক বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে ও লব্ধজ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছে দেবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশবিদ ড. আইনুন নিশাত বলেন, এখন আর অতীতের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের চিন্তা করা যাবে না। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী হারিকেনকে বলা হয়েছিল দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু তা ব্যাপকভাবে আঘাত হেনেছে। সামনের ২০-৩০ বছর জলবায়ুর বিরুপ প্রতিক্রিয়া হঠাৎ করে বেড়ে যাবে। দিন দিন খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে বলল সতর্ক করেন তিনি। তাই আরো বেশি গবেষণা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের প্রতি জোর দেন এ গবেষক।

সভায় সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক  জুলিয়েট কেয়া মালাকার বলেন,  সেন্টারটি আমাদের দেশকে জলবায়ু সমৃদ্ধি, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং শূন্য কার্বন নির্গমন পথের দিকে ধাবিত করবে ।  শুধুমাত্র সক্ষমতা বৃদ্ধির অনুষ্ঠান, গবেষণা বা সম্মেলনের জন্যই তার দরজা উন্মুক্ত রাখেনি। এটি সেই সকল মানুষ- যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা জানতে চায় এবং অভিযোজনের উপায়গুলো ও পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চায়-তাদের সকলের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে।

সেন্টারটি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক  থেকে বৈশ্বিক গবেষণার কেন্দ্রতে পরিণত হবে বলে আশা করছেন ড. সালিমুল হক। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও জলবায়ুর প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি। পরস্পরের মধ্যে জ্ঞান বিনিময়ের তাগিদ দেন এ গবষক।

উল্লেখ্য, ১০ বছরের পরিকল্পনা ও নির্মাণকাজের পর অবশেষে খুলে দেয়া হলো সেন্টারটি। এ জলবায়ু কেন্দ্রটি রাজধানী ঢাকা থেকে  ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত

এমএস

×