ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত ঋষিজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০২২

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত ঋষিজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

শিল্পকলায় ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর ৪৬ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সমবেত সংগীত পরিবেশনা

সময়টা ছিল ১৯৭৬ সাল। সেই প্রতিকূল সময়ে গণসংগীতকে আশ্রয় করে দেশজ সংস্কৃতি বিকাশে যাত্রা শুরু করে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী। বরেণ্য গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের গড়া সেই সংগঠনটি পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে মিটিয়েছে সময়ের দাবি। বিকশিত করেছে দেশের গণসংগীতের চর্চাকে। সময়ের স্রোতধারায় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনটি এ বছর পাড়ি দিল প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে।

সাফল্যের সেই উদ্যাপনে ৪৬ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতির শক্তিতে গড়ে তোল সম্প্রীতি স্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং বরেণ্য সাংবাদিক ও জনকণ্ঠের সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে। স্মরণ করা হয় ফকির আলমগীর ও আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফসহ সম্প্রতি প্রয়াত শিল্প-সংস্কৃতি ভুবনের কীর্তিমান মানুষদের। বিশিষ্টজনের কথনের সঙ্গে গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও নাচের নান্দনিকতার সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সজ্জিত ছিল আয়োজন। শনিবার হেমন্তের বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চার গুণীজনকে শিল্প-সংস্কৃতি ও শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালের ঋষিজ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধিত ব্যক্তিরা হলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান (শিক্ষা), দিলারা জামান (অভিনয়), কবি শিহাব সরকার (সাহিত্য) এবং লিলি ইসলাম (সংগীত)।
সম্মেলক সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে আয়োজনের সূচনা হয়। সেই সুবাদে অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সকলে মিলে গেয়ে ওঠেÑ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ...। জাতীয় সংগীতের সুরটি থামতেই উচ্চারিত হয় সংগঠনের সঙ্গীতÑ আমরা ঋষিজ করি/আমরা তো যাত্রিক ঋষিজের সন্তান...। এরপর উদ্দীপনার সেই রেশ ধরে পরিবেশিত হয়- ভয় নেই কোন ভয় জয় সাম্যের জয় ...।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যক সেলিনা হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

সভাপতিত্ব করেন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি বেগম সুরাইয়া আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমর বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ফকির সিরাজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আতাউর রহমান বলেন, সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। কারণ, বাঙালির রয়েছে হাজার বছরের গৌরবময় সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ। ছড়িয়ে দিতে হবে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বারতা। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গানকে সঙ্গী করে দেশের সকল ক্রান্তিকালে ভূমিকা রেখেছে ঋষিজ। গণসংগীতকে অবলম্বন করে তারা ৪৬ বছর ধরে মানুষের বঞ্চনার কথা বলেছে। গানে গানে মানুষকে মুক্তির প্রেরণার মন্ত্র শুনিয়েছে। আগামীতেও গণমানুষের অধিকার আদায়ে গণসংগীতকে আশ্রয় করে মানবিক স্বদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাবে সংগঠনটি।
পরিবেশনা পর্বে একক সংগীত পরিবেশন করেন আবু বকর সিদ্দিক, ফকির সাহাবউদ্দিন ও অনিমা মুক্তি গোমেজ। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম ও ইকবাল খোরশেদ। নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে উদীচী, ক্রান্তি, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, উত্তরায়ণ, ভিন্নধারা, উজান, উঠোন ও ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে হানিফ খান।

×