ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

পঞ্চম শ্রেণির লেখাপড়া বিষয় : বিজ্ঞান অধ্যায়- দ্বিতীয় পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১৩ আগস্ট ২০২১

পঞ্চম শ্রেণির লেখাপড়া বিষয় : বিজ্ঞান অধ্যায়- দ্বিতীয় পরিবেশ দূষণ

কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন উত্তর : ১. পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ ব্যাখ্যা কর। ২. শব্দ দূষণ কী? শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কী? ৩. পরিবেশ সংরক্ষণ কী? আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি? ৪. মাটি দূষণ কেন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? ৫. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কেন পরিবেশ দূষিত হয়? ৬. মাটি এবং পানি দূষণের সাদৃশ্য কোথায়? ৭. শব্দ দূষণের তিনটি উৎসের নাম লিখ। শব্দ দূষণ রোধে তোমার তিনটি করণীয় লেখ। ৮. পরিবেশ সংরক্ষণ কী? পরিবেশ সংরক্ষণে তোমার চারটি করণীয় লেখ। ৯. পরিবেশ দূষণের তিনটি কারণ লেখ। পরিবেশ দূষণ রোধে তিনটি পরামর্শ লেখ। ১০. মাটি দূষণের ফলে আবাদি জমি ও পশুপাখির উপর দুটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখ। পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিবেশীদের উদ্বুদ্ধ করতে তোমার চারটি করণীয় লেখ। ১১. মানব স্বাস্থ্যের উপর শব্দ দূষণের তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখ। শব্দ দূষণ রোধে তিনটি করণীয় লেখ। উত্তর ঃ (১) পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। দূষণের ফলে জীব-জন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হয়। খাদ্য শৃঙ্খল ধ্বংস হয়। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। (২) উচ্চ আওয়াজ, গোলমাল বা বিভিন্ন উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। শব্দের এ আধিক্যই হলো শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণ মানুষের ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে। শব্দ দূষণের ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, কর্মক্ষমতা হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যা শব্দ দূষণের ফলে হয়ে থাকে। (৩) প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং যথাযথ ব্যবহারই হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ। আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করি- তা নিম্নরূপ i) বিদ্যুৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো। ii) গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে পায়ে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা। iii) ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে মাটিতে চাপা দেয়া। iv) অধিক হারে বৃক্ষরোপণ করা। v) কারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ, তেল ইত্যাদি পরিবেশে ফেলার পূর্বে পরিশোধনের ব্যবস্থা করা। (৪) মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। দূষিত মাটিতে ফসল চাষ করলে উৎপন্ন ফসলেরও ক্ষতিকর বস্তু থেকে যায়, যা রান্নার পরও খাবারে থেকে যায়। ফলে এসব ফসল খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে মানুষের দেহে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এ কারণেই মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। (৫) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করছে। এতে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যেমন- মানুষ তার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য গাছপালা কেটে ফসল চাষ করছে। আবার আসবাবপত্র, কলকারখানা তৈরির জন্য গাছপালা কাটা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে পানি দূষিত করছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এ থেকে নির্গত ধোঁয়া দিয়ে বায়ু দূষণ হচ্ছে। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে এসব কর্মকান্ডের জন্য মানুষ তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে পরিবেশ আরও বেশি দূষিত হবে। (৬) মাটি ও পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে মাটি ও পানি দূষিত হয়। গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য বা কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে মাটি ও পানি দূষিত হয়। কৃষি জমিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক মাটি দূষিত করে। এসব সার ও কীটনাশক পরবর্তীতে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে নদী-নালা, পুকুরের পানিতে গিয়ে পড়ে পানি দূষিত হয়। তাই বলা যায়, দূষণের কারণের দিক দিয়ে মাটি ও পানি দূষণের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। (৭) শব্দ দূষণের তিনটি উৎস হলো- i) বিনা প্রয়োজনে বাজানো হর্ণ ii) লাউড স্পিকার বা মাইকের শব্দ iii) কলকারখানায় ব্যবহৃত বড় বড় যন্ত্রপাতির শব্দ শব্দ দূষণ রোধে আমার করণীয় তিনটি কাজ হলো- i) বিনা প্রয়োজনে হর্ণ বাজাবো না ii) শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করবো। iii) উচ্চ স্বরে গান বাজাবো না। ৮) প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা এবং যথাযথ ব্যবহারই হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ। পরিবেশ সংরক্ষণে আমার চারটি করণীয় হলো- র) গাড়ির পরিবর্তে পায়ে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা ii) ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। iii) বেশি বেশি গাছ লাগানো। iv) জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া। (৯) পরিবেশ দূষণের তিনটি কারণ হলো- i) কারখানার ধোঁয়া। ii) কল-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন না করে পরিবেশে ফেলা। iii) জনসংখ্যা বৃদ্ধি। পরিবেশ দূষণরোধে তিনটি পরামর্শ নিম্নে দেয়া হলো- i) কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে পরিবেশে ফেলা। ii) বেশি বেশি গাছ লাগানো। iii) ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। (১০) মাটি দূষণের ফলে আবাদি জমি ও পশুপাখির উপর দুটি ক্ষতিকর প্রভাব হলো- i) জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। ii) গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায়। পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিবেশীদের উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের করণীয় চারটি কাজ হলো- i) জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা ii) গাছপালা রোপন করে পরিবেশ সংরক্ষণ করা। iii) ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। iv) প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমানো। (১১) মানব স্বাস্থ্যের উপর শব্দ দূষণের তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব হলো- i) শ্রবণ শক্তি হ্রাস। ii) ঘুমে ব্যাঘাত। iii) কর্মক্ষমতা হ্রাস। শব্দ দূষণ রোধে তিনটি করণীয় হলো- i) যখন তখন হর্ণ না বাজানো। ii) উচ্চ শব্দ সৃষ্টি না করা। iii) শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
×