ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডিএসই চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালকদের দ্রুত অপসারণের দাবি

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ডিবিএ’র ৩০ দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১২ আগস্ট ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ডিবিএ’র ৩০ দাবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান নানা দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। ডিবিএ দাবি করেছে, এর আগে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে সবকিছু জেনেই তাদের চুপ থাকতে হয়েছে। এখন দেশে বিপ্লব হয়েছে সেই বিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজারকে বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি দাবি করেছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান দীর্ঘসময় অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকা- করেছে। ফলে বাজারের  কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।
সোমবার ‘দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এ সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত রাষ্ট্র গঠনে কাজ করবে। তারা সবস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করে দেশকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী করবে। আমরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এ সরকারকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
২০০৯-২০১০ সালে শেয়ারবাজার পতনের পর লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যান। শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। এরপর থেকে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে যান।
বাজার পতনের কারণ ও দোষীদের খুঁজে বের করতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সেই কারসাজি চক্র আরও সক্রিয় হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়।
২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে ড. এম খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে এসে এ পদে আসীন হন। এ দীর্ঘসময়ে তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকা-ের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।

ডিবিএ সভাপতি বলেন, ২০১০ সালের বাজার পতনের পর ড. এম খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা, কারসাজি রোধে বাজারে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ভালোমানের আইপিও এনে বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনা, প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের ন্যায় ভয়াবহ অরাজকতা বন্ধ করা, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যে অঙ্গীকার নিয়ে  বাজারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, উপরোক্ত প্রতিটা অনিয়মে তাদের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আইপিওর নামে গত ১৪ বছরে যে পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইপিওর মাধ্যমে বাজারে অনুপযুক্ত, দুর্বল, মানহীন, দেউলিয়াগ্রস্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আপনারা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আপনারা প্রতিটি আইপিওর দুর্বলতা ও নেতিবাচক দিকগুলো বিশদভাবে প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ‘ফ্লোরপ্রাইস’ নামক একটি অদ্ভুত নিয়ম আমাদের বাজারে আরোপ করা হয়েছে। এ ফ্লোর প্রাইস শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং বাজারের স্বাভাবিক লেনদেন ও বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শেয়ার দরের ফ্লোরপ্রাইস একটি অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর নিয়ম হিসেবে বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে।

এ নিয়মের কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ আমাদের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ফ্লোরপ্রাইস তুলে দিলে বাজার কিছুদিনের জন্য ভালো হয়, কিন্তু পুনরায় ফ্লোরপ্রাইস আরোপে বাজারের স্বাভাবিক গতি থেমে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়ে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই, প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে আইপিও লিস্টিং ও ডি-লিস্টিং করবার ক্ষমতা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা দেখি, আইপিও লিস্টিং-এর ক্ষেত্রে বিএসইসিই সর্বেসর্বা এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। স্টক এক্সচেঞ্জের এখানে ভূমিকা নেই বললেই চলে। এভাবে বাজারে আনা মানহীন আইপিওর দায় বিএসইসির ওপরই বর্তায়।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে গত ১৪ বছর ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সব সুশাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন বাস্তবায়নে বিদ্যমান ট্রেকগুলোর ইস্যুতে যথাযথ নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের হস্তক্ষেপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেক ইস্যুতে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।

ডিএসই, সিএসইসহ সিডিবিএল ও সিসিবিএল-এর পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের এখনো উপস্থিতি রয়েছে। তাদের অনভিজ্ঞতা ও অদূরদর্শিতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। আমরা দাবি জানাই, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সরিয়ে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় সংগঠিত করা হোক। তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে, যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন সরকারের নির্দেশে গঠিত হয়েছিল এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা তসরুফ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার দাবি জানাই এবং যাদের অর্থ নেওয়া হয়েছে, তাদের অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিগত সময়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশে রোডশো আয়োজন করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল।

এ রোডশোগুলো থেকে বিনিয়োগ আনার পরিবর্তে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিটি রোডশোর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি এবং কত টাকা খরচ হয়েছে এবং এর বিনিময়ে কত টাকা অর্জন হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। বিগত দুটি কমিশন গত ১৩-১৪ বছরে আমাদের অনেক দিনের গড়া সুশৃঙ্খল সম্ভাবনাময় বাজারকে ওলট-পালট করে দিয়েছে।

এসব অপশাসন ও অপকর্মে তার সঙ্গে কমিশনের বহু অসৎ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। যারা পদ ও পদবির লোভে, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে কমিশনের সঙ্গে জোট বেঁধে বাজারের ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করেছে।

×