রাজস্ব হারাচ্ছে ৪৮৭ কোটি টাকা
দেশে ক্রমেই নকল বিড়ির আগ্রাসন বাড়ছে। এসব সকল বিড়িতে সরকার নির্ধারিত ব্যান্ডরোল থাকে না। কিংবা থাকলেও তা নকল বা পুনঃব্যবহৃত ব্যান্ডরোল থাকে। এতে নকল বিড়ি উৎপাদকরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
জানা যায়, বর্তমানে ২৫ শলাকার ১ প্যাকেট বিড়ির দাম সরকার নির্ধারণ করেছেন ১৮ টাকা, যার মাঝে সরকার নির্ধারিত শুল্ক ৯.০৯ টাকা। তাই ৯ টাকার কম দামে বিক্রি হওয়া বিড়িকে নকল বিড়ি হিসেবে গণ্য করা যায়। কম দামে ভোক্তার কাছে বিড়ি বিক্রির প্রত্যাশা থেকেই নকল বিড়ির উৎপাদিত হচ্ছে।
নকল বিড়ির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সর্বনি¤œ ৫ টাকাতেও বিড়ির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ৯ টাকা ও তার কমে বিক্রিত বিড়ির ব্র্যান্ডের সংখ্যা ৭৫১টি। বাংলাদেশে সর্বমোট মাসে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৫ প্যাকেট নকল বিড়ি বিক্রি হয়। প্রতি প্যাকেটে ৯.০৯ টাকা হিসেবে কর ফাঁকির কারণে প্রতি মাসে ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮০ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, যা বছরে দাঁড়াচ্ছে ৪৮৭ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৬ টাকা।
বিড়ির মূল্য বাড়ানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে কর আহরণ বৃদ্ধি পেলেও, পরবর্তীতে তা ধরে রাখা যায়নি, বরঞ্চ কর আহরণ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিড়ির মূল্য ছিল প্যাকেট প্রতি ১২.৫০ টাকা ও মোট আহরিত কর ছিল ৮৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি প্যাকেট বিড়ির মূল্য ছিল ১৪ টাকা আর আহরিত কর ছিল ৯৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ টাকা ছিল প্রতি প্যাকেট বিড়ির দাম আর কর আহরিত হয়েছিল ১০৮৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট কর আহরিত হয়েছিল যথাক্রমে ১০৪৬ কোটি ৯৮ লাখ এবং ১০৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এই দুই অর্থবছরেই ১৮ টাকা ছিল প্রতি প্যাকেট বিড়ির দাম। ওই গবেষণা আরও দেখা যায়, বিড়ির মূল্য বৃদ্ধির কারণে নকল বিড়ি উৎপাদন উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে আসল বিড়ির উৎপাদন কমেছে।
বিড়ি উৎপাদকরা বলছেন, বিড়ির দাম যখন কম ছিল, তখন নকল বিড়ির অস্তিত্ব তেমন ছিল না। বিশ বছর আগে বিড়ির দাম ছিল ২.৮৩ টাকা। তারপরে বিড়ির দাম ক্রমাগতভাবে বেড়েছে, যার মাঝে রয়েছে কয়েকবারের অতিমাত্রায় বৃদ্ধি-২০১৫-১৬ বছরের ৪.৯১ টাকা থেকে ২০১৬-১৭ তে ৭.১০ টাকা, ২০১৭-১৮ তে ১২.৫০ টাকা, ২০১৯-২০ এ ১৪.০০ টাকা ও ২০২০-২১ এ ১৮.০০ টাকা।
বিড়ির দাম যখন বেড়েছে, তখন কমদামে বিড়ি প্রাপ্তির একটা বাজার তৈরি হয়েছে। আর নকল বিড়ি সেই বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছে। বিড়ি থেকে সরকার নির্ধারিত শুল্ক আদায়ের মাধ্যম হচ্ছে ব্যান্ডরোল। বিড়ি উৎপাদনকারীরা সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে ব্যান্ডরোল কিনে তা বিড়ির প্যাকেটে লাগিয়ে দেয়। বৈধ ব্যান্ডরোল সম্বলিত বিড়িই হচ্ছে আসল বিড়ি।
পক্ষান্তরে নকল বিড়ি হচ্ছে ব্যান্ডরোল বিহীন, নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত কিংবা একই ব্যান্ডরোল পুনঃব্যবহার করা। যে সকল বিড়ি সরকার নির্ধারিত শুল্ক প্রদান না করে বিক্রি হয় সেগুলোই নকল বিড়ি।
বিড়ির অধিকাংশ ভোক্তাই হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির। সারাদেশের সর্বত্রই রয়েছে এর বাজার।