ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১৯, ১৩ মার্চ ২০২৩

বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান শেয়ারবাজার

.

২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ৪৮০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ বিনিয়োগ। এই বিশাল অর্থ জোগানের সূতিকাগার হিসেবে দেখা হচ্ছে শেয়ারবাজারকে। রবিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বিষয়ক এক সেশনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে আরও শক্তিশালী করা গেলে বিনিয়োগের জন্য কেবল ব্যাংক ঋণের ওপরে নির্ভরশীলতা কমবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ঋণখেলাপি কমাতে আমরা উদ্যোক্তাদের ঋণের বদলে গ্যারান্টি দেব। আর উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলবে। ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন, অন্যদিকে যারা টাকা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে খেলাপির মনোভাব কমে আসবে। এ ছাড়া অর্থনীতির দিকগুলোকে শক্তিশালী করতে বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করার দিকে জোর দিয়ে রউফ বলেন, ট্রেজারি বন্ডকে শক্তিশালী করতে পারলে বাজারে বিনিয়োগের ধারা বৃদ্ধি পাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে গর্ভনর বলেন, মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বাজারে পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা কমানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধি থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিভিন্ন মান নিয়ে সমস্যা সমাধানে আব্দুর রউফ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোর দিয়ে এক ব্যাপারে কাজ করছে।
অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ৯৯ শতাংশ অর্থ আসে ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। মাত্র ১ শতাংশ অর্থের জোগান দেয় শেয়ারবাজার। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সৃষ্টিতে একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজারের কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেছেন, আমাদের পুঁজিবাজারে আরও অনেক অনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। আমাদের এখানে যে পরিমাণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়লে আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন এবং বিনিয়োগ বাড়বে।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার যৌক্তিক করতে হবে। ছোট পুঁজির কোম্পানিগুলোর জন্য কর হার যৌক্তিক করতে হবে। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের কোম্পানিগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে। আমাদের তথ্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিকতা করতে হবে। আর আমাদের প্রাইস ডিসকভার যৌক্তিক করতে হবে। এজন্য সরকারের উচিত অবকাঠামো উন্নয়নে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন করে বেসরকারি খাতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। এক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, মালয়েশিয়া ও ভারত যেভাবে কাজ করে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করা হয়েছে। এ প্ল্যাটফর্ম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির শেয়ারের জন্যও ভালো। এটা আমাদের পুঁজিবাজারের একটা ভালো সংস্কার। সুকুকের মতো কর্পোরেট বন্ড এবং ইসলামিক বন্ডের লেনদেন সহজতর করার জন্য বন্ড মার্কেট প্ল্যাটফর্মও চালু করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন প্রক্রিয়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন দ্বারা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে যোগ্য বিনিয়োগকারীর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য। তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভস মার্কেট চালু করতে কাজ চলছে। 
এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ডেরিভেটিভস মার্কেট চালু করতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কাজ করে যাচ্ছে। আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রিয়েল এস্টেট ডেরিভেটিভ মার্কেট (আরইআইটি) নিয়ে কাজ করছে। আসিফ ইব্রাহিম আরও বলেন, আমাদের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কাটতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। যাতে এ সংস্কার বাস্তবায়ন হতে পারে। আর সবশেষে বলতে চাই, আমাদের আরও দক্ষ হতে হবে।

×