ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

দর বেড়েছে ৩৬২টির

নতুন সরকার গঠনের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা

অপূর্ব কুমার

প্রকাশিত: ০০:৩২, ১১ আগস্ট ২০২৪

নতুন সরকার গঠনের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা

মঙ্গলবার থেকেই চাঙ্গা শেয়ারবাজার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন গত মঙ্গলবার থেকেই চাঙ্গা শেয়ারবাজার। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঘিরে আশার আলো বুনতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতদিন শেয়ারবাজারকে ঘিরে আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকা বিনিয়োগকারীরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।

পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) লেগেছে। সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা বিএসইসিতে আসছেন না। তবে কমিশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এই পরিবর্তনের হাওয়াতে সবচেয়ে বেশি উড়ছে বিএনপি ঘরানার মালিকদের কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীও ঝাঁপিয়ে পড়ছেন এসব কোম্পানির শেয়ারে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারের শপথ নেওয়ার দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৩৬২টির বা ৯১ শতাংশের দর বেড়েছে। এর মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ দর বেড়েছে ২৬৬টির। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৯২৪ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। ২০১১ সালের ৯ মার্চের পর বা গত সাড়ে ১৩ বছরে একদিনে আর কোনোদিনই এত সূচক বাড়েনি। বৃহস্পতিবারে সূচক বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
এর আগের দিন বুধবারে শেয়ারবাজারে সার্বিক সূচক বেড়েছে ১৯২ পয়েন্ট। মূলত শেখ হাসিনার পতনের পর ওইদিন সরকারবিহীন থাকলেও ডিএসইতে মোট ৭৭৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। মঙ্গলবার সরকারের পদত্যাগের পরদিন শেয়ারবাজারে মোট সূচক বাড়ে ১৯৭ পয়েন্ট। ওইদিন শেয়ারবাজারে ৭৪৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা জানান, বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগের নিজেদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা চান বিনিয়োগ থেকে ভালো ও নিশ্চিত মুনাফা। যখন দেখেন লগ্নি করে মুনাফা করার সুযোগ বেড়েছে তখনই বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে শেয়ারবাজারে আসেন। এতে শেয়ারবাজারে উত্থান ত্বরান্বিত হয়। গত কয়েকদিনের লেনদেন দেখে মনে হচ্ছে, তারা দেশের পরিবর্তন নিয়ে অনেক আশাবাদী।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, গত ৫ জুলাইয়ের আগে পর্যন্ত দেশের মানুষের সামনে ছিল শুধু হতাশা। পটপরিবর্তনে এমন আশা তৈরি হয়েছে, যা কয়েকদিন আগেও কল্পনার অতীত ছিল। দেশের শেয়ারবাজারে যারা বিনিয়োগ করেন তারা এ দেশেরই মানুষ। তারাও আশাবাদী যে, অর্থনীতির আকাশে কালো মেঘ কেটে যাবে, তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা।
আবু আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার বিগত সরকার কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের মরীচিকায় মানুষকে আটকে রেখেছিল। বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, সরকারের রাজস্ব আয়ের অঙ্ক দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। শেষ সময়ে এসে এসব মরীচিকা দূর হয়ে সত্য বেরিয়ে আসছিল। ফলে অর্থনীতির পুরো কাঠামো যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল সবার মনে। এতে শেয়ারবাজারে দিনের পর দিন ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
নতুন আশাবাদ তৈরির কারণ ব্যাখ্যায় আবু আহমেদ বলেন, ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী বেশ সমাদৃত ব্যক্তি। শুধু তাত্ত্বিক দিক থেকে নয়, প্রায়োগিক দিক থেকেও অর্থনীতি বেশ ভালো বোঝেন। বর্তমানের বড় সমস্যার  একটি হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট। আশা করা যায়, ড. ইউনূসের সঙ্গে পশ্চিমাবিশ্বের সুসম্পর্ক থাকায় উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা বাড়াবে।

ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেয়ারদর বাড়ার কারণে ডিএসইএক্স সূচক ৬৯৫ পয়েন্ট বেড়েছে। সূচক বাড়ার হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত একযুগে অল্প সময়ে এত বৃদ্ধি আর দেখা যায়নি।
পয়েন্ট বিবেচনায় বৃহস্পতিবারের বৃদ্ধি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ১৩তম সর্বোচ্চ। একদিনে সর্বোচ্চ ১০১২ পয়েন্ট বেড়েছিল ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি। অবশ্য ওই সময় শেয়ারদরে সার্কিট ব্রেকার ছিল ২০ শতাংশ, যা এখন ১০ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত সব শেয়ারই তৎকালীন প্রধান সূচকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন তালিকাভুক্ত ৩৬০ শেয়ারের মধ্যে সূচকভুক্ত ২৫২টি। সূচক বাড়ার হার বিবেচনায় বৃহস্পতিবারের বৃদ্ধি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ১৫তম সর্বোচ্চ। একদিনে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ সূচক বেড়েছিল ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, বুধবার শেয়ারদর বাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভালো শেয়ারের আধিক্য দেখা গেলেও বৃহস্পতিবারসহ বাকি দুই দিন ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দর কম-বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর বাড়ছে, যা বেশ ইতিবাচক। এসব শেয়ার ছাড়া ব্যাংকের শেয়ারদর বৃদ্ধি ও সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রাখছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দর টানা তৃতীয় দিনে যতটা পতন হতে পারত ততটাই পতন হয়েছে। এমনকি বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশের বিপরীতে ক্রেতা ছিল না। তবে দেশীয় ও বহুজাতিক সব মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে।

×