
মায়ের ভালোবাসা
ছেলে মেয়ের জন্য জন্য হারিয়ে ফেলা জীবন, ঘুম, শান্তি, আরাম সবই একদিন ফিরে আসবে। শুধু বাচ্চার শৈশবটা ফিরে আসবে না- সকাল সকাল তার ময়লা কাঁথা কাপড়গুলো আর সযত্নে ধুতে হবে না। তার জন্য শখ করে আর খেলনা কেনা হবে না। জেদ করে দাঁত হীন মাড়ি দিয়ে কামড় দিতে চাইবে না, দুই হাত মুঠ করে আমার চুল ছিঁড়বে না, বাবার চুল ধরে টান দিবে না। তার জন্য আলাদা খাবারের পেরেশানিটা থাকবে না।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলনাগুলো গোছানোর কাজ আর পাব না। নতুন খেলনা দেখলে তার বাবা আর কিনবে না। এই হাতে তাকে আর গোসল করিয়ে দিতে হবে না, খালি বুকটায় তাকে আর জড়িয়ে ধরে ঘুম হবে না। কারণ সন্তান বড় হয়ে যাবে। অসীম যে যন্ত্রণায় ভুগে তাকে নিজের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে জন্ম দিয়েছিলাম, সেই যন্ত্রণার ব্যথাও শেষ হয়ে গেছে... কাটাছেঁড়া সেলাই হওয়া শরীরটা নিয়ে এই দুই হাতে তাকে প্রথমবার জড়িয়ে ধরেছিলাম- সেই দিনও গত হয়ে গেছে।
এভাবে কত শত দিন, কাল, মাস, বছর পেরিয়ে যাবে! আমার কোল ছেড়ে দিয়ে নিজে সংগ্রাম করে বাঁচা শুরু করবে। বুলি না ফোটা যে মুখটার কথার সঙ্গে আমি মা তাল মিলাই- এই মায়ের সঙ্গে অনেক কথা তার আর বলা হবে না। এই আমাদের তখন তাকে নিয়ে থাকা সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে হবে। সে তার নিজের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে যাবে বলে। যেই শৈশব তার স্মৃতিতে থাকবে না, তার সেই শৈশব আমাদের স্মৃতি জুড়ে থাকবে।
আমার প্রথম সন্তান- যাকে পেয়ে আমি প্রথম মা হয়েছি! যে মুহূর্তে তোমার হৃদস্পন্দন প্রথমবার শুনেছিলাম, আমার পৃথিবী এমনভাবে বদলে গিয়েছিল যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। তুমি আমাকে শিখিয়েছ সেই শক্তি- যা আমার ছিল বলে জানতাম না। সেই ধৈর্যÑ যা আমার প্রয়োজন হবে বুঝিনি এবং এক গভীর ভালোবাসাÑ যা আমার পুরো অস্তিত্বকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে।
তোমার সঙ্গে আমি সবকিছুর প্রথম স্বাদ পেয়েছি- তোমার ছোট্ট লাথি, তোমার প্রথম কান্না, তোমার হাসি, আর সেই সব দীর্ঘ-নিদ্রাহীন রাত! যা এক অদ্ভুত মায়াবি অনুভূতি এনে দিত এবং এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তে আমি বুঝতে পারলাম, তোমাকে সারাজীবন সীমাহীন ভালোবাসব। জীবন আমাদের যেখানেই নিয়ে যাক না কেন, তুমি সবসময় এই আশ্চর্য যাত্রার শুরু। তুমি আমাকে নিখাঁদ ভালোবাসার অর্থ শিখিয়েছ। তুমি আমাকে মা বানিয়েছ। আর এ জন্য আমি তোমাকে চিরকাল ভালোবাসব এবং আগলে রাখব। এ কথা কখনো ভুলে যেও না...
ব্যস্ত জীবনের বেড়াজালে আমরা এমন হয়ে গেছি যে, মায়ের এসব অনুভূতির কথা কখনো জানার প্রয়োজনই বোধ করি না। আমরা বড় হয়ে গেলে মায়েরা বাঁচে এসব স্মৃতি রোমন্থন করে আর আমাদের মঙ্গল কামনায়, আমাদের পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সব কিছু সামনে তৈরি রাখার চিন্তায়। আসুন, শুধু দিবস নয়, আজ থেকেই আমরা মায়ের মনের খোঁজ জানার চেষ্টা করি।
মায়েরা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কখনোই মুখ ফুটে আপনার কাছে কিছু খুঁজবেনা। তাই আমরাই মায়ের গোপন এই অভাবগুলো মিটানোর চেষ্টা করব। যত ব্যস্তই থাকিনা কেন, প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট তাদের সঙ্গে সময় কাটাব। ঠিক শৈশবে যেমন হাজার ব্যস্ততায়ও মা আমাদের সময় দিয়েছেন। এখনো আমার ‘ভালো’ চিন্তায় দিনমান কাটান...