ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

স্থানীয়দের স্বস্তি

পরিষ্কার হলো বাইশটেকি জয়নগর খাল

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০২৩

পরিষ্কার হলো বাইশটেকি  জয়নগর খাল

পরিষ্কার করার পর মিরপুরের বাইশটেকি-জয়নগর খাল

রাজধানীর মিরপুরের বাইশটেকি জয়নগর খাল। এক সময় দুটি খালেই প্লাস্টিকসহ আবর্জনার স্তূপ ছিল। কচুরিপানা, লতাপাতায় ঢাকা। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই আটকে যেত পানি। নগরে সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতা। আর শুষ্ক মৌসুমে খালের নোংরা পানিতে প্রজনন বিস্তার করত কিউলেক্স মশা। বছরজুড়ে দুপাড়ে বসবাসকারীদের অস্বস্তিতে রাখতো খাল দুটি।

অবস্থা থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে বাইশটেকি জয়নগর খাল পরিষ্কার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এতে খালে তৈরি হয়েছে পানিপ্রবাহ। খালের দুপাড়ে লাগানো হচ্ছে ফল ঔষধি গাছ। সকাল-বিকাল খালপাড়ে ঘুরতে যাচ্ছেন মহল্লার লোকজন।

ডিএনসিসির উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, আগে খাল দুটিতে জমা আবর্জনার স্তূপের ওপর দিয়ে পশু-পাখি হেঁটে এপার-ওপার চলাচল করত। খালটিতে পানি প্রবাহ ছিল না বললেই চলে। আর শুষ্ক মৌসুমে জমে থাকা পচা পানির দুর্গন্ধে খালপাড়ে হাঁটাচলা করা ছিল দুষ্কর। এখন খালটি পরিষ্কার করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি। এভাবে নগরের সব খাল পরিষ্কার রাখলে মানুষ উপকৃত হবে।

ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএনসিসির অধীনে ২৯টি খাল এবং একটি রেগুলেটিং পন্ড রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি খাল বেদখলে। সেখানে গড়ে উঠেছে হাজারো বহুতল ভবন, মার্কেট। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব খালের সীমানা নির্ধারণে কাজ করছে ডিএনসিসি। আর মিরপুরের বাইশটেকি জয়নগরের মতো যেসব খাল দখলমুক্ত রয়েছে, সেগুলোতে পানিপ্রবাহ তৈরির কাজ চলছে।

২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ১৩টি খাল সিটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় ঢাকা ওয়াসা। এসব খালের উন্নয়ন করতে গিয়ে ডিএনসিসি দেখে, খালপাড় অবৈধ দখলদারের দখলে। অনেক জায়গায় সীমানা পিলার নেই, থাকলেও সেগুলোর অবস্থান সঠিক নয়। অবস্থায় সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য খালগুলো নির্ধারিত প্রস্থ গভীরতায় খননের জন্য সঠিক সীমানা নির্ধারণ, প্রকৃত সীমানা বরাবর পিলার স্থাপন, অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণ খালের জিএস ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় উত্তর সিটি।

পাশাপাশি ডিএনসিসিরনতুন ১৮টি ওয়ার্ডের আরও ১৬টি খাল এবং কল্যাণপুরে একটি রেগুলেটিং পন্ডের সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পর সীমানা নির্দেশক পিলার স্থাপন, খাল পন্ডের জিআইএস ডেটাবেজ তৈরিকরণশীর্ষক প্রকল্প নেয় ডিএনসিসি।

বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূর তথা পানিপ্রবাহ তৈরি করতে ওই ১৩টি খাল ডিএনসিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এসব খাল নান্দনিকভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খালগুলো দেশে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এখন সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলমান। তার আগে শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার উপদ্রব থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে বাইশটেকি জয়নগর খালের আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন মশককর্মীরা। এসব খালে মশার ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে মশার লার্ভা নেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১৩ নম্বর থেকে প্যারিস খাল গিয়ে যুক্ত হয়েছে বাইশটেকি খালে। খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। ফলে খালে তৈরি হয়েছে পানিপ্রবাহ। খালের দুপাড়ে স্থানীয়রা হাঁটাচলা করছেন। তবে দুপাড়ে চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো ওয়াকওয়ে দেখা যায়নি।

১৩ নম্বর সেক্টরে বাইশটেকি খালপাড়ে চার বছর ধরে চায়ের দোকান চালান ফারুক মিয়া। আলাপকালে তিনি বলেন, খালটা পরিষ্কার করার পর দেখতেই ভালো লাগছে। তবে খালে যাতে বাসা-বাড়ির পয়োবর্জ্যরে লাইন না দেওয়া হয়, কর্তৃপক্ষকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। আর খালপাড়ে হাঁটাচলার পথ তৈরি করে দিলে নাগরিকরা বিকেলে বেড়াতে পারবেন।

গত ২৩ নভেম্বর নিজেদের ফেসবুক পেজে বাইশটেকি খালের দুটি ছবি পাশাপাশি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয় ডিএনসিসি। স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘...বাইশটেকি খালের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা পরিষ্কার করেছেন ডিএনসিসির মশককর্মী। আশা করি, নগরবাসী খালটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকবে। যদি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলে খালে ফেলে, পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে খুব বেশি দিন লাগবে না। আমাদের চারপাশ নোংরা কেন? কারণ আমরা যত্রতত্র ময়লা ফেলে নোংরা করি তাই।

মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টর কালভার্ট এলাকা থেকে জয়নগর খাল শুরু হয়েছে। এটি বিভিন্ন পথ ঘুরে মিরপুর-১১ নম্বরে পলাশ নগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, খালের প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশ পরিষ্কার করেছে ডিএনসিসি। খালে এখন পানিপ্রবাহ হচ্ছে। খালের দুপাড়ে হাঁটাচলা করছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে খালের দুপাড়ের বিভিন্ন অংশে নানা প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তবে পলাশ নগরে খালের শেষ অংশে পানিতে কিছু আবর্জনা ভাসতে দেখা গেছে। এই অংশে পানির রং খুবই কালো। পানি থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

জয়নগর খাল পাড়ে একটি বহুতল ভবনের মালিক শফিউল আলম। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে নদী ঢাকার ভেতরের খালগুলো নাগরিকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে খালগুলো আজ মৃতপ্রায়। যে যার মতো করে খালে ময়লা ফেলছেন, দখল করছেন। তবে এখন ডিএনসিসি খালগুলো থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করায় পরিবেশ খুব ভালো লাগছে। ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাইশটেকি জয়নগর খাল পরিষ্কার করেছে ডিএনসিসির অঞ্চল- এর মশককর্মীরা। আর তাদের তদারকি করছেন অঞ্চলটির সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফারজানা আফরোজ। গত ২৬ নভেম্বর তিনি এই দুটি খাল পরিদর্শন করেছেন।

জানতে চাইলে ফারজানা আফরোজ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি কমে যায়। তখন জমে থাকা ময়লা পানিতে কিউলেক্স মশা জন্মায়।

তাই ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশনায় আমরা খাল দুটি পরিষ্কারে কাজ করছি। খালে যাতে মশা না জন্মায় এবং কেউ যাতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সে বিষয়টি তদারকি করছি।

 

×