কালের সাক্ষী কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেল মিউজিয়ামের খ- চিত্র। কিংবদন্তি নেতা সুভাস চন্দ্র বসুকে বন্দি রাখার কক্ষ। বন্দিদের ওপর ব্রিটিশ পুলিশের নির্যা
বিপ্লবী নেতাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া ঐতিহাসিক ফাঁসির মঞ্চ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশসহ ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রখ্যাত নেতাদের বন্দি রাখা সেই কারা কক্ষগুলোর সামনেই নারী-পুরুষ ও শিশু দর্শনার্থীদের ভিড়। তাছাড়া সন্ধ্যায় ভিড় জমে অন্যতম আকর্ষণ ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ দেখতে। সিকিউরিটি গার্ড শেখ আজাহার উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনই এসব স্মৃতি দেখতে অসংখ্য মানুষ আসেন এখানে। তবে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন মানুষের চাপ থাকে আরও বেশি। আজাহারের বাড়ি কলকাতার হাওড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে। এ দৃশ্য ‘আলিপুর সেন্ট্রাল জেল’ অভ্যন্তরের। উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কালের সাক্ষি আজ কলকাতার শতাধিক বছরের পুরনো ‘আলিপুর জেল’। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অবিসংবাদিত কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু, যিনি নেতাজী নামে সমধিক পরিচিত।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প-িত জওহরলাল নেহরু ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বহু রাজনৈতিক নেতাকে বন্দি রাখা হয় এই জেলে। স্বাধীনতা সংগ্রামী অনন্তহরি মিত্র, দীনেশ গুপ্ত ও দীনেশ মজুমদারসহ অনেক বিপ্লবীকে দেওয়া হয় ফাঁসি। বন্দিদের সেই কক্ষ, ফাঁসির মঞ্চসহ ব্রিটিশ পুলিশ ও বিপ্লবীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঐতিহাসিক সব দলিল সংরক্ষিত রয়েছে এই জেলে। তবে এটি এখন আর কারাগার নয়। এক সময়ের আলিপুর সেন্ট্রাল জেল বর্তমানে ‘আলিপুর জেল মিউজিয়াম’। আজ কলকাতার বহু ঐতিহ্যের মধ্যে একটি ‘আলিপুর জেল’। এটি এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দর্শন করছেন ঐতিহাসিক এই জেল মিউজিয়াম। এখানে অন্যতম আকর্ষণ ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’। ডিজিটাল এই লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম বা আলো এবং শব্দের সংমিশ্রণে নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ঘটনা, ব্রিটিশদের অত্যাচার-নির্যাতন এবং প্রখ্যাত বিপ্লবীদের বীরত্বগাথা জীবনীসহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। শো চলাকালীন সময় তৈরি করা হয় গা ছমছম করা এক পরিবেশ। যা দেখলে ও শুনলে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে হয় দুই শতাধিক বছর পূর্বে সেই ব্রিটিশ-ভারত যুগে।
ফাঁসির মঞ্চসহ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতাদের বন্দি রাখার ‘কারা সেল’ প্রভৃতি রয়েছে আকর্ষণের তালিকায়। স্থাপনাটি ঘুরতে এসে ব্রিটিশ শাসন-শোষণ ও বিপ্লবীদের অদম্য সাহসিকতার সেই স্মৃতিকেই খুঁজে ফিরছেন নানা বয়সের দর্শনার্থীসহ আজকের প্রজন্ম। মিউজিয়াম ঘুরে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ‘সেন্ট্রাল জেল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ‘আলিপুর কারাগার’। এটি নির্মাণ করা হয় ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের সময়। সেই থেকে এটিকে ‘কেন্দ্রীয় কারাগার’ হিসেবেই ব্যবহার করেছে ব্রিটিশরা। বহু বিখ্যাত মানুষের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে লাল প্রাচীর ঘেরা এই কারাগারের সঙ্গে। হেরিটেজ সাইট হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ১০৮ একর এলাকাজুড়ে রূপান্তরিত করা হয় ‘আলিপুর জেল মিউজিয়াম’। ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এর দু’দিন পরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মিউজিয়াম। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানা ও জাদুঘরের পাশাপাশি বর্তমানে জেল মিউজিয়ামটিও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে কলকাতা শহরে। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসেন এই মিউজিয়ামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি রাখা ও ফাঁসি দেওয়ার জন্য কলকাতার আলিপুরে তৈরি করা হয় এই কারাগার। এর আগে ছিল লালবাজার ও হরিণবাড়ি জেল। ১৮৮১ সালে জেল দুটিকে একত্রিত করে তৈরি করা হয় বড় একটি কারাগার। যার নাম দেওয়া হয় ময়দানের জেল। এর আগে ১৮৬৪ সালে তৈরি হয় আদি আলিপুর জেল। এ সময় প্রেসিডেন্সি জেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো ময়দানের জেল। পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে আদি গঙ্গার পাড়ে নতুন করে তৈরি করা হয় বর্তমান আলিপুর জেল। মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে কারাগারের গোড়াপত্তন হয় ১৮১০ সালে। এর পর ১৯২৯ সালে উপমহাদেশজুড়ে একযোগে প্রেসিডেন্সি কারাগার, আলিপুর কারাগার, মেদিনীপুর কারাগার, ঢাকা কারাগার ও রাজশাহী কারগারকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ সময় ‘আলিপুর জেল’ পরিণত হয় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের আটক রাখার পীঠস্থানে। বিভিন্ন সময়ে এখানে যারা বন্দি ছিলেন তাদের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, কলকাতা পুরসভার প্রথম মেয়র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কলকাতা পুরসভার তৎকালীন মেয়র যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, অগ্নিযুগের বিপ্লবী চারুচন্দ বসু, নকশাল ও মাওবাদী রাজনীতিবিদ চারু মজুমদার, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী এবং দীনেশ গুপ্তের মতো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আলিপুর জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় অনন্তহরি মিত্র, দীনেশ গুপ্ত, দীনেশ মজুমদার, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী, কানাইলাল দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, বীরেন্দ্রনাথ দত্ত গুপ্ত, গোপীনাথ সাহা (গোপীমোহন), রামকৃষ্ণ বিশ^াসের মতো অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের। ব্রিটিশবিরোধী নেতাদের বন্দি রাখা ও ফাঁসি দেওয়ার ঐতিহাসিক আলিপুর জেলটিকে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এটিকে হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে আলিপুর জেল একটি মিউজিয়াম। পাশাপাশি জেলের একটি কক্ষকে করা হয়েছে পুলিশ মিউজিয়াম। এতে ব্রিটিশ পুলিশ ও বিপ্লবীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের রিভলভার, পিস্তল, তরবারি, বোমার খোলসহ সেই সময়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। উল্লেযোগ্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিপ্লবী ভূপেন্দ্র কিশোর আচার্যের বাজেয়াপ্ত ৫ চেম্বারের রিভলভার। ১৯১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের সত্যেন্দ্র নাথ বোসের ব্যবহৃত রিভলভার, দীনেশ গুপ্তের ব্যবহৃত পিস্তল প্রভৃতি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেস হিস্ট্রি এবং কিছু বিপ্লবী ঘটনার বিবরণ রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩০ সালে চার্লস টেগার্টকে হত্যা প্রচেষ্টা। ১৯১০ সালে ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ঢাকা অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী কার্যক্রম। রাসবিহারী বসুর ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত হওয়া ও আলিপুর বোমা মামলা উল্লেখযোগ্য। আলিপুর জেল মিউজিয়ামের বিশেষ আকর্ষণ সংগ্রামীদের বন্দি রাখার কারাকক্ষগুলো। এর মধ্যে রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসু সেল, চিত্তরঞ্জন দাশ সেল, জওহরলাল নেহরু সেল, ফাঁসির মঞ্চ, ওয়াচ টাওয়ার, এভি কক্ষ, লাইব্রেরি, সেমিনার কক্ষ, প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং কারা হাসপাতাল। রয়েছে কফি হাউজ। কারা মিউজিয়াম অভ্যন্তরের পরিবেশ খুবই চমৎকার। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সাজানো-গোছানো সব যেন ছবির মতো। ফুলের বাগান আর গাছগাছালিতে সাজানো। কোথাও একটি পাতাও পড়ে নেই। মাটিতে শোভা পাচ্ছে সবুজ ঘাসের সমারোহ। পীচঢালা কিংবা কোথাও কোথাও ছোট ছোট কালচে পাথরের তৈরি মসৃণ রাস্তা। কারাকক্ষের সব বিল্ডিংয়ের রং ব্রিটিশদের সেই মেরুন কালার। যা ব্রিটিশ শাসনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে কারা অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন এক মায়াবি পরিবেশ। এখানে প্রবেশ করলেই মন যেন হারিয়ে যায় কোনো এক অজানা দেশে। আনমনে ঘুরতে ঘুরতে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার কানে ভেসে আসবে রক্ত হিমকরা লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ক্ষুদিরাম বসুর বিখ্যাত সেই গান ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ কিংবা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো রবীন্দ্রসংগীত, অথবা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সংগীত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট, কিংবা চল-চল-চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল নিম্নে উতলা ধরণীতল’ প্রভৃতি বিপ্লবী গান। বিশাল এলাকাজুড়ে জেল মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে আপনাকে প্রচুর সময় নিয়ে আসতে হবে। অন্তত ৪/৫ ঘণ্টা। তা না হলে দেখা শেষ হবে না। এ ছাড়া মিউজিয়ামে জীবনীসহ ছবি-প্রতিকৃতি ও নথিপত্রে স্থান পেয়েছে ১৮৫৭ সালের ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ নেতা মঙ্গল পা-ে, রানী ভিক্টোরিয়া, সাঁওতাল বিদ্রোহ, লর্ড রবার্ট ক্লাইভ, ১৭৫৭ সালে পলাশি যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভ ও মীর জাফর, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা, সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ও দেশ বিভাগ। স্থান পেয়েছে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। জাতীয় কবি নজরুল সম্পর্কে লেখা রয়েছে, ‘অগ্নিযুগের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। তিনি ‘ধূমকেতু’ ও ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা দু’টি সম্পাদনা করতেন। সরকারবিরোধী লেখার জন্য তিনি ১৯২২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর সশ্রম কারাদ- ভোগ করেন’। নারী বিপ্লবীর মধ্যে বীণা দাস (ভৌমিক), প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদা ও কল্পনা দত্তের (যোশী) নাম রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নেতা মাস্টারদা সূর্য সেন, যুগান্তর দলের সংগঠক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ‘বাঘাযতীন’, ক্ষুদিরাম বসু, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন প্রভৃতি।
প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে এই জেল মিউজিয়াম ঘুরতে আসেন সপরিবার, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ কয়েকশ’ মানুষ। তবে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন রবিবার এখানে ভিড় থাকে অনেক বেশি। কথা হয় পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া এলাকার দেবাশিস সিংহের সঙ্গে। পরিবারসহ তিনি এই মিউজিয়ামে ঘুরতে এসেছেন। দেবাশিস সিংহ বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার জন্য যেসব বিপ্লবী কারাবরণ করেছেন, জীবন দান করেছেন; এখানে এসে তাদের স্মৃতি আরও একবার মনে পড়ে গেল। জীবন উৎসর্গকারী সেই বীর-বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়’। তিনি বলেন, ‘আলিপুর জেল মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ায় এখন থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের দেশ ও বিপ্লবী নেতাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এভাবেই বাংলার ইতিহাস বেঁচে থাকবে। আর আগামী প্রজন্ম বলবে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, প-িত জওহরলাল নেহরু, ক্ষুদিরাম বসুর মতো সংগ্রামীরা ছিলেন বলেই দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে।’ মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি এলাকার বরুণ কুমার কু- বলেন, ‘দেশমাতৃকার প্রতি অসামান্য শ্রদ্ধা রেখে যারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন সেই বিপ্লবীদের বহু ইতিহাস আলিপুর মিউজিয়ামে তুলে ধরা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এই মিউজিয়ামে এলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতীয় নেতাদের এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ঘটনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ৬ দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা অবধি খোলা থাকে জেল মিউজিয়াম। সোমবার বন্ধ। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০ রুপি। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চলে সোমবার বাদে প্রতিদিন দু’টি করে। এটি মূলত রাতের অনুষ্ঠান। প্রথম শো শুরু হয় সন্ধ্যা ৬.৩০ এবং দ্বিতীয় শো হয় রাত ৭.৩০ মিনিটে। ৪০ মিনিটের অনুষ্ঠান। প্রবেশ মূল্য ১০০ রুপি। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো জেল মিউজিয়ামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এখানে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ঘটনা, বিপ্লবীদের অদম্য সাহসিকতাসহ স্বদেশী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয় আলো এবং শব্দের সংমিশ্রণে। শোনা যায় বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায়। দূরে জেল হাসপাতালসহ ৫/৬টি স্থাপনা ও বাগানজুড়ে চলে এই আলো এবং শব্দের খেলা। স্থাপনার দেয়াল ও গায়ে ভেসে ওঠে চিত্র।
এ সময় গা ছমছম করা এক পরিবেশ তৈরি হয়। বিশাল মাঠের সামনে খোলা আকাশের নিচে গ্যালারিতে বসে দর্শকরা উপভোগ করেন এই শো। অনুষ্ঠান শুরু হয় কারাগারের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সার্চ লাইট মেরে এবং শেষ হয় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। এসবের ভিডিও-চিত্র ধারণ নিষেধ।