ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১ জুন ২০২৩

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

তীব্র গরমে মধ্যরাতেও লোডশেডিং, বিপর্যস্ত জনজীবন

একদিকে গরম; শুধু গরম কেন বলি, অসহনীয় গরম। অন্যদিকে লোডশেডিং। রাজধানীর সাধারণ মানুষের জীবন একেবারে ‘তেজপাতা’ হয়ে গেছে। গত কদিন ধরেই প্রখর রোদ। টানা তাপপ্রবাহ। ঘরের বাইরে তো বটেই, ভেতরেও অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গা ঘামছে তো ঘামছেই। শুকোবার সময় পাচ্ছে না। এমনকি যখন সূর্য আড়ালে চলে যাচ্ছে তখনো ভ্যাপসা গরম। বিচ্ছিরি গরমে নাগরিক দুর্ভোগ যখন চরমে তখন আবার দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। যে সে লোডশেডিং নয়। মুহূর্তে মুহূর্তে চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কখনো এক ঘণ্টার জন্য। কখনো আধা ঘণ্টা। দুই বিতরণ সংস্থা- ঢাকা ইলেকট্রিক কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) তথ্য মতে, তারা গত বুধবার ঢাকা শহরে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করেছে।

বৃহস্পতিবারের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তীব্র গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং। বলা চলে, নরকযন্ত্রণা দিচ্ছে রাজধানীবাসীকে। রাতে ঘুমের মধ্যেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বিছানা ছাড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। আর শুয়ে থাকলে গায়ের ঘামে বিছানার চাদর, মাথার বালিশ ভিজে যাচ্ছে। বিকল্প বিদ্যুৎ বা রিচার্জেবল ফ্যান সবার ঘরে থাকে না। ফলে অনেকেই হাতপাখা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। বিশেষ করে ছাত্রাবাস বা মেস জীবনের কষ্ট কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে লোডশেডিং। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

তাই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। গরম বাড়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। চাহিদা যত বাড়ছে ঘাটতিও তত বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি উল্লেখ করা যায়। বুধবার বিকেল চারটায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১ হাজার ৯০৫ মেগাওয়াট। চাহিদার চেয়ে ৩২৪ মেগাওয়াট কম সরবরাহ পেয়েছে তারা। আর একই সময়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তারা সরবরাহ কম পেয়েছে ১৭৯ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ডেসকো ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পেয়েছে।

একই সময়ে ডিপিডিসি কম সরবরাহ পেয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াটের মতো। দুই বিতরণ সংস্থা বলছে, চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি সমন্বয় করতে নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া সহসা আর কোনো সমাধান আছে বলে মনে হচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস অবশ্য বলছে, বৃষ্টি হবে। তবে আরও দুই/একদিন পর। কোনো উপায় যেহেতু নেই, বৃষ্টির জন্য আরও দুই/একদিন, আসুন, অপেক্ষা করি।      
বাজেটের দিনে নানা হিসাব-নিকাশ ॥ বাজেট বিষয়টি কেউ বোঝেন। কেউ  বোঝেন না। তবে এ নিয়ে আগ্রহ দেখান প্রায় সব শ্রেণির মানুষ। এবারো ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বিরাট এই অঙ্কের হিসাব মেলানো সাধারণ নাগরিকের কাজ নয়। তবে যেটুকু জানা-বোঝা তার ভিত্তিতেই অনেকে আলাপ জমিয়ে তুলেছেন। ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাতে, চায়ের দোকানে, গণপরিবহনে বাজেট নিয়ে গল্প চলছে। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিচিত্র বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন, ভালোই তো বাজেট দিয়েছে সরকার। কঠিন সময়ের বিবেচনায় সাহসী বাজেট। এখন বাংলাদেশ আরও স্মার্ট হয়ে যাবে। আবার কেউ বলছেন সেই কথাটি: গরিব মারার বাজেট দিয়েছে সরকার।

এই বাজেটে তাদের নিজেদের লোকদেরই ভালো হবে শুধু। সাধারণ মানুষ হবে আরও গরিব। তবে বিপরীত রাজনীতির জায়গা থেকেই যে এমন বিশ্লেষণ সেটা অনুমান করা যায়। এর বাইরে কোন্ কোন্ জিনিসের দাম বাড়ল, কমল কোন্গুলোর, তা বোঝার জোর চেষ্টা হচ্ছে। এরই মাঝে পরিষ্কার হয়ে গেছে, একটু বড় স্বপ্ন দেখছিলেন যারা তাদের কাজটা কঠিন হয়ে যাবে এবার।  বহুদিনের জমানো টাকায় ফ্ল্যাট কিনবেন? মূল্য বৃদ্ধির কারণে সেটা মুশকিল হয়ে যেতে পারে। গাড়ির বেলায়ও প্রায় একই অবস্থা। ফ্রিজের দামও বাড়বে। বিদেশ ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণেও করহার বাড়ছে। আরও বহু জিনিসের দাম বাড়বে। এর বিপরীতে দাম কমবে সামান্য জিনিসের। তবে এখনো সব চূড়ান্ত নয়। বাজেট পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আলোচনা চলবে। এসব আলোচনা থেকে সরকার হয়ত কিছু গ্রহণও করবে। যেন করে।

×