
শিল্পকলার নন্দন মঞ্চে ফানুস উড়িয়ে আরণ্যকের নাট্যোৎসব উদ্বোধন
সমাজ বদলের আকাক্সক্ষায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে জন্ম নিয়েছিল নাট্যদল আরণ্যক। নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণি সংগ্রামের সুতীক্ষ হাতিয়ার স্লোগানে গড়া দলটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৫০ বছরে পদার্পণ করে।
প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ পেরুনোর সেই উদ্যাপনে বছরজুড়ে ছিল দলো নানা আয়োজন। আর শুক্রবার থেকে আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের মাধ্যমে শুরু হলো পঞ্চাশ বছর পূর্তির সমাপনী অনুষ্ঠান। থিয়েটারের নতুন বার্তা বিধ্বস্ত পৃথিবীর জন্য স্লোগানে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে উৎসব। নতুন-পুরনো মিলিয়ে উৎসবে মঞ্চস্থ হবে নয়টি নাটক। বর্ণিলতার প্রতিচ্ছবিময় উৎসবের নাটকের সঙ্গে থাকছে লোকসংগীত ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা, আদিবাসী সংগীত, প্রকাশনা উৎসব, আলোচনা ও সেমিনার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আরণ্যকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাট্যজন মামুনুর রশীদ। স্বাগত কথন শেষে আরণ্যকের নাট্যকের্মীদের সঙ্গী করে প্রদীপ জ্বেলে ও ফানুস উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন ঝিমিত ঝিমিত চাকমা। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করা শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী ঝিমিত উদ্বোধকের বক্তব্যে বলেন, আমি পাহাড়ের মানুষ। এ উৎসবে সব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছি । আমাকে দিয়ে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করিয়ে আরণ্যক মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের সকলের প্রতি সম্মান দেখাল। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখানে এসে আমি উজ্জ্বীবিত বোধ করছি। উদ্বোধকের কথন শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল রিদম।
স্বাগত বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, নাটক করা খুব সহজ কাজ নয়। অনেক মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। বিগত পঞ্চাশ বছর নাটকের মাধ্যমে মানুষকে সামাজিক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার সংগ্রাম করেছি। আমরা নাটকের মাধ্যমে মানুষকে নতুন বার্তা দিতে চেষ্টা করেছি সব সময়। মৌলবাদ ও মানবতা বিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছি। নাটক মানে নতুন ভাবনা, নতুন চিন্তা। আজকের পৃথিবী সত্যিই বিধ্বস্ত। মধ্যবিত্তের পক্ষে জীবন চালানো কঠিন। বিধ্বস্ত পৃথিবীর জন্য নাটকের মাধ্যমে বার্তা দিতে চাই। আমরা চাই, শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি এগিয়ে চলুক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রথম দিন একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় আরণ্যকের জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘ওরা কদম আলী’। মামুনুর রশীদ রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন হারুন রশীদ। মানবিক মূল্যবোধ, শ্রেণি সংগ্রাম আর প্রতিরোধের চেতনায় উদ্দীপ্ত ওরা কদম আলী আরণ্যকের শুরুর দিকের প্রযোজনা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার মামুনুর রশীদের ‘নাট্যসমগ্র ৪’, হারুন রশীদের ‘পাঁচটি নাটক’ ও অপু মেহেদীর ‘আরণ্যকের নাট্যচর্চা’ গ্রন্থগুলোর প্রকাশনা উৎসব হবে। থাকবে আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘ইবলিশ’। ২৯ জানুয়ারি নাট্যশালার লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত, বেহালা বাদন এবং সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে মান্নান হীরা রচিত ও শাহ আলম দুলাল নির্দেশিত নাটক ‘ময়ূর সিংহাসন’। ৩০ জানুয়ারি নাট্যশালার লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত সরোদ বাদন এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালায় হারুন রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘রাজনেত্র’ মঞ্চস্থ হবে। ৩১ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় লবিতে থাকবে আদিবাসী সংগীত এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত ‘রাঢ়াঙ’। ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় লবিতে থাকবে লোকসংগীত এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ‘নানকার পালা’। ২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত বাঁশি এবং সন্ধ্যা ৭টায় মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত ‘কহে ফেসবুক’। ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে থাকবে ‘পঞ্চাশে আরণ্যক : অভিঘাতের অভিজ্ঞান’ শীর্ষক সেমিনার। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘সংক্রান্তি’। রাত ৯টায় হবে উৎসব সমাপন।