ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণছন্দে উদ্দীপ্ত সাইফুদ্দিন আহমেদের ক্যানভাস

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩০, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

প্রাণছন্দে উদ্দীপ্ত সাইফুদ্দিন আহমেদের ক্যানভাস

ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে সাইফুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী দেখছেন অতিথিরা

ইচ্ছাশক্তি মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে তার কাক্সিক্ষত গন্তব্যে। ক্রমাগত সাধনায় হতে পারে লক্ষ্যপূরণ। হতে পারে স্বপ্নের বাস্তবায়ন। স্বপ্নকে ছুঁতে পারা তেমনই একজন সাইফুদ্দিন আহমেদ মাহবুব। পেশায় উন্নয়ন কর্মী এই মানুষটির একসময় ছবি আঁকার সাধ জাগে। চারুকলার প্রথাগত দীক্ষা না থাকলেও শখের বশে মধ্যবয়সে শুরু করেন আঁকাআঁকি। পরের গল্পটি চিত্রকলার ভুবনে নিজেকে সমর্পিত করার। সেই সমর্পণে দীর্ঘ ১২ বছরের সাধনায় রপ্ত করেন চিত্রকর্ম সৃজনের করণকৌশল।

অতঃপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চিত্রণের দক্ষতা। নিবিড়ভাবে লেগে থাকার ফলশ্রুতিতে সকল ঘাটতি মিটিয়ে একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন পরিণত শিল্পী। রঙের ওপর রং চাপিয়ে সাজাতে থাকেন চিত্রপট। রেখার সঙ্গে কম্পোজিশনের সম্মিলনে মেলে ধরেন আপন অভিব্যক্তি। কৃত্রিমতার খোলস ছেড়ে প্রাণছন্দে উদ্ভাসিত হয়েছে বিমূর্ত ধারার সেসব ছবি। সেই চিত্রকর্মগুলো এখন ঝুলছে লালমাটিয়ার গ্যালারি শিল্পাঙ্গনের দেওয়ালে। চলছে শিল্পীর প্রথম একক প্রদর্শনী। শিরোনাম ড্রিমস অ্যাসেনড্যান্ট বা স্বপ্নের উত্থান। প্রকৃত অর্থেই সাইফুদ্দিনের চিত্রকর্মগুলো স্বপ্নের পথরেখায় ধাবিত হয়েছে। অভিব্যক্তি আশ্রয়ী প্রতিটি ক্যানভাস ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতার অনুভব। বলে যায় অনুভূতি-সঞ্চারী বিবিধ গল্প।
রবিবার বিকেলে এই শিল্পায়োজনের সূচনা হয়। যৌথভাবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন ও শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিল্পী সাইফুদ্দিন আহমেদ মাহবুব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্পাঙ্গনের পরিচালক রুমী নোমান।
অনুভূতি প্রকাশে সাইফুদ্দিন আহমেদ মাহবুব বলেন, চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ আমার দীর্ঘকালের। সেই ভালোলাগার টানে অসংখ্য ছবি সংগ্রহ করেছি। সংগ্রহের আগ্রহের কারণেই অনেক স্বনামধন্য শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছি। শিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মশালায় গিয়েছি। সেখানে মগ্ন ছাত্রের মতো পাশে বসে দেশসেরা শিল্পীদের কাজ দেখেছি এবং শেখার চেষ্টা করেছি। তাদের গল্প শুনেছি। তাই ক্লাসরুমে বসে ছবির পাঠ না নিলেও এই শিল্পীদের সান্নিধ্য আমাকে ছবি আঁকার রসদ জুগিয়েছে।
নিসার হোসেন বলেন, প্রচলিত ছবি আঁকার ছাঁচে মাহবুব নিজেকে নিয়োজিত করেননি। শিল্পীদের প্রবণতা থাকে যেমন ছবি বিক্রি হচ্ছে সেইরকম ছবি আঁকা। সাইফুদ্দিন সে পথে হাঁটেননি। বরং তার মনের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিয়ে ক্যানভাসে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সেখানেই তিনি নিজেকে পরিণতভাবে শিল্পরসিকদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন।
শিশির ভট্টাচার্য বলেন, আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়া শিল্পী। মাহবুব সেটা নন। তিনি ভালোলাগা থেকে শিল্পী হয়ে উঠেছেন। আর্টে ভুলটাও কখনো কখনো আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। নতুন পথের সৃষ্টি করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীরা কখনো ভুল করেন না। মাহবুবের ছবিতে ব্যাকরণের বদলে সাবলীলতার প্রকাশ দেখি। যা তাকে মুক্ত শিল্পের পথে নিয়ে গেছে। তার প্রদর্শনী দেখে আমি নিজে ভেবেছি, আমি কী কখনো এমন স্বতঃস্ফূর্ত ছবি আঁকতে পেরেছি।
সাইফুদ্দিনের ক্যানভাসে প্রথাগত শিল্পশিক্ষার আবেশ না থাকলেও মুক্ত তুলি আঁচড় আনমনে প্রায় মিশে গেছে প্রচলিত শিল্পশিক্ষার আঙিনায়। কখনো আবার শিল্পীর সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাষার প্রকাশ ঘটেছে সেই তুলির টানে।

দিগি¦দিক ছুটে বেড়ানো ক্যানভাসে জায়গা করে নিয়েছে বাংলার কাদা-মাটি কিংবা অন্তরীক্ষ। স্বদেশের সমান্তরালে বিশ্বচরাচরকেও ছুঁয়ে গেছেন সাইফুদ্দিনের সৃষ্টির নির্যাস। রঙের সঙ্গে রেখার খেলার পারঙ্গমতার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে এই শিল্পীর কাজে। চিত্রকর্ম সৃজনে ঘটেছে পরিপূর্ণতার প্রকাশ। ফর্ম, রঙের প্রয়োগ ও টোনালিটির সম্মিলনে সাবলীল রূপে উদ্ভাসিত হয়েছে সাইফুদ্দিনের চিত্রকর্মসমূহে। সার্বিকভাবে পরিমিত প্রকাশের আঙ্গিকে তার ছবি খুঁজে নিয়েছে স্বতন্ত্র শিল্পভাষা। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ৮৯টি চিত্রকর্ম। অ্যাক্রেলিক, কালি ও তুলি, চারকোল, রেনোকাট ও এচিং অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে কাজ করেছেন এ শিল্পী। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

 

×