ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন উদ্যোগ নতুন পথচলা

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০১:১২, ২৫ নভেম্বর ২০২২

নতুন উদ্যোগ নতুন পথচলা

.

কিশোরী বেলায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী। নেচেছেন বগুড়ার আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর অনেক অনুষ্ঠানে। মা-বাবার দুই সন্তানের মধ্যে তিনি বড়। সুচিকর্মের হাতেখড়ি ছোটবেলায়। নৃত্য ও সুচিকর্মের সঙ্গে লেখাপাড়া চালিয়েছেন সমান তালে। তবে বেশিদূর এগোতে পারেননি। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারপর অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেমে পড়েন। বগুড়ার এই মেয়ের নাম ফারহানা আজমীর সুমী। বয়স ৩৭। নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এই নারী কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে চলেছেন। ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন প্রতিটি পদক্ষেপে। তার কর্মকা- প্রশংসিত হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর সময় তিনি বসে থাকেননি। শহরতলি এলাকায় ঘরে বসে নারী উদ্যোক্তা হয়ে অনলাইনে শাড়ির নক্সা ও গায়ের চাদরে নানা ধরনের নক্সা করে বিক্রির পথ তৈরি করেন। বুটিক তো ছিলই। দিনে দিনে সাফল্য আসে। অনেকেই অনলাইনে তার ডাকে সাড়া দিয়ে শাড়ি, চাদর, থ্রি পিসে হাতের কাজ করিয়ে নেন। ছোট সাফল্যই একসময় বড় সাফল্য এনে দেয়। এর আগে ২ হাজার সালে তার বিয়ে হয় স্থানীয় ঠিকাদার আপেল মাহমুদের সঙ্গে। তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক মেয়ে। সে মাধ্যমিক পাস করেছে। করোনাকালের সাফল্যকে সঙ্গে নিয়ে পরের বছর শিথিল করোনায় কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রেনারশিপের (এসএমই) জন্য প্রশিক্ষণ নেন স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামে। বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে নারী উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি হস্ত শিল্পের পণ্য উৎপাদন ছাড়াও নতুন আরও কি করা যায় তা ভাবতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি দেখতে পান বগুড়া নগরীতে ছাদ বাগানের বিস্তার ঘটছে। কেউ ছাদের টবে ফুল গাছ লাগাচ্ছে। কেউ ছাদের টবে গড়ে তুলছে সবজি বাগান। বগুড়ায় বর্তমানে অধিকাংশ বহুতলবাড়ির ছাদে বাগান তৈরি হচ্ছে। তিনি লক্ষ্য করেন বাগান তৈরিতে মাটির চাহিদা বেড়েছে। অনেকে মাটি না পাওয়ায় ছাদ বাগানের আশা পূরণ করতে পারছেন না।  কেউ ছাদ বাগান করে মাটির অভাবে সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ছাদের টবের মাটি সরবরাহ করবেন। বর্তমানে তিনি ছাদ বাগানের মাটি সরবরাহ করে অর্থনৈতিকভাবে আরও সচ্ছল হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়টি জানার পর অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ফ্রেস মাটি পৌঁছে দেন নির্দিষ্ট বাড়িতে। এ জন্য ঠেলাগাড়ি ঠিক করে দেন তিনি। খরচ বহন করতে হয় ছাদ বাগানের মালিককে।
বগুড়া নগরীর ছাদ বাগানের কয়েক ব্যক্তি জানালেন তারা মাটি পেয়ে বাগান সম্প্রসারণ করেছেন। মাটির অভাবে তা করতে পারছিলেন না। ফারজানা সুমী জানালেন মাটি সরবরাহের পাশাপশি তার শেখা বাটিক ব্লক হাতের কারুকাজের সুচি শিল্প হ্যান্ড পেইন্টের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে তার স্বামীর ঠিকাদারি কাজে কি করে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই ভাবনা পেয়ে বসে। তিনি তার বাসভবনের আশপাশের এলাকায় দেখতে পান অনেকে বাড়ি নির্মাণের ইচ্ছে থাকলেও নানা জটিলতায় তা করতে পারছেন না। আবার ডেভেলপরকেও দিতে পারছেন না। তিনি ও স্বামী সিদ্ধান্ত নেন অন্যের বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ করবেন। বিদেশে সুমীর পরিচিতজনদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করলে তারা সাড়া দেন। তারপর আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সকলেই এই পথে এগিয়ে আসেন।
সুমীর এই নতুন প্রকল্পের সারমর্ম হলো : বাড়ির মালিক নির্মাণ কাজের অর্থ ব্যয়ের একটি এগ্রিমেন্ট করবে সুমীর ফার্মের সঙ্গে।  সুমীর ফার্ম প্রথমে নিজেরা অর্থ লগ্নি করে নির্মাণ কাজ শুরু করে পার্ট বাই পার্ট চুক্তির অর্থ নেবে। বাড়ির সব নির্মাণ কাজ এবং ফিনিশিং শেষ হলে বাড়ি তুলে দেওয়া হবে মালিককে। এর আগে বাড়ির নক্সা তৈরি ও অনুমোদন এবং আনুষঙ্গিক কাজ বাড়ি নির্মাণের সব তদারকি সুমীর ফার্ম করবে। প্রাথমিক উপকরণাদি সুমীর ফার্ম সরবরাহ করবে।
বগুড়া নগরীতে সুমীর এই কাজ দেখে সুমীকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে স্বজনরা। অন্যান্য নারী ভাবনাচিন্তা করছে তারাও কি ভাবে এগিয়ে যেতে পারে। তারা সুমীর কাছে পরামর্শ নিচ্ছে। সুমীও বলছে সাহস ও কনফিডেন্স থাকলে এগিয়ে চলা কঠিন কঠিন নয়। জয়ের সেই পথ দেখাচ্ছে বগুড়ার সুমী।

 

×