‘জেন্টল গ্রাস’ শীর্ষক প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম দেখছেন এক দর্শনার্থী
শিল্পকর্ম সৃজনে জীবনবোধে অনুপ্রাণিত এক শিল্পী আনিসুজ্জামান ফারুকী। সেই সুবাদে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে উঠে আসা এই তরুণের শিল্পে উঁকি দেয় প্রকৃতি ও জীবনের প্রতিচ্ছবি। মূর্ত কিংবা বিমূর্ত ধারায় উপস্থাপিত হয় নানা ঘটনা বা অঘটন। সেখানে দৃশ্যমান হয় তার চারপাশের জগত। স্বরূপে উদ্ভাসিত হয় সমুদ্র তলদেশের গাছপালা। ভিন্নরকম সৌন্দর্যে নজর কাড়ে আকাশে ঝুলে থাকা চাঁদমামা।
পরিবার অথবা পাশের বাড়ির বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটি হয়ে ওঠে শিল্পীর শিল্প নির্মাণের অনুষঙ্গ। মূলত ব্রোঞ্জ ও লোহাকে ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে ভাস্কর্য গড়েছেন ফারুকী। ভাস্কর্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চারকোল মাধ্যমে চিত্রিত চিত্রকর্ম। উভয় মাধ্যমের সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হলো ‘জেন্টল গ্রাস’ শিরোনামে ভাস্কর্য ও ড্রইং প্রদর্শনী।
শুক্রবার বিকেলে এই শিল্পায়োজনের সূচনা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালারুখ সেলিম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুূষ্ঠানে আর্টকন প্রকাশিত জেন্টল গ্রাস শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন, শিল্পকর্মের মাধ্যমে সময় এবং পারিপার্শ্বিকতাকে ধারণ করেছেন আনিসুজ্জামান ফারুকী। নিজ জীবনের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অনুষঙ্গ হয়েছে তার শিল্পের বিষয়। শ্রম ও মেধার সম্মিলনে চেনা সেই জগতকে শিল্পের আশ্রয়ে মেলে ধরেছেন এই শিল্পী।
আনিসুজ্জামান ফারুকীর কাজের মূল্যায়নে অধ্যাপক লালারুখ সেলিম বলেন, শিল্প সৃজনে নতুন ভাবনা ও চিন্তাকে ধারণ করেছেন এই শিল্পী। পাশাপাশি শিল্পসৃষ্টিতে সেই ভাবনাকে বাস্তবায়নের দক্ষতা রয়েছে। তরুণ হলেও ভাস্কর্যের মতো শ্রমসাধ্য শিল্পমাধ্যমে স্বকীয়তার পরিচয় রেখেছেন।
অনুভূতি প্রকাশে আনিসুজ্জামান ফারুকী বলেন, আমার কাজগুলো গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার ফসল। শিল্পকর্ম সৃজনে জীবনের ভেতর থেকে আসা উপলব্ধি আমাকে তাড়িত করেছে। আমি যা দেখি কিংবা যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে সেটাই শিল্পের রসদ হিসেবে ধরা দিয়েছে। তাই শিল্প এবং নিজ জীবনকে আলাদা কিছু মনে হয় না আমার কাছে। জীবন ও প্রকৃতিকে সহজভাবে উপলব্ধির মাধ্যমে তা থেকে শিল্প সৃষ্টি করাই আমার উদ্দেশ্য। হতে পারে সেটা মূর্ত কিংবা বিমূর্ত।
ফারুকীর প্রদর্শনীর কাজগুলো জল ও বাতাসের ছন্দে দোদুল্যমান। ছন্দায়িত বক্র রেখার সঙ্গে ধাতব পাতের আকার ও গড়নের সংবেদনশীল সমন্বয় যেন সমুদ্রের ঢেউ আর বাতাসের স্পর্শ বয়ে নিয়ে আসে। রেখা ও আকারের মেলবন্ধনে নির্মিত হয় নিখুঁত ভারসাম্য। প্রকৃতির শক্তি ও জৈব গড়নের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তার কাজে ছন্দায়িত রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। উপকরণ ব্যবহারে সূক্ষ্মতা ও সংবেদনশীলতা এই শিল্পীর ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য। ধাতব মাধ্যমের ভাস্কর্যের সঙ্গে কাঠ কয়লায় করা চিত্রকগুলোও মূলত সংবেদনশীলতার অনুভূতিকেই প্রতিফলিত করে।
আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। সোম থেকে শনিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।