.
অবৈধ ঘোষণা দিয়ে বার বার বন্ধের উদ্যোগ নিলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা। সাধারণ প্যাডেলচালিত রিক্সার মতো দেখতে হলেও সিটের নিচে ব্যাটারি ও চেনের সঙ্গে মোটর সংযুক্ত করে চলছে অলিগলিতে। একদিকে এসব রিক্সার বেপরোয়া গতির কারণে যেমন হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি অবৈধ লাইনে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুতের।
জানা যায়, রাজধানীর কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, মা-া, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, বছিলা, মধ্যবাড্ডা ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় দেদার চলছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা। গলির ভেতরে এসব রিক্সা চললেও সুযোগ বুঝেই গলি থেকে বের হয়ে মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে।
উত্তর বাড্ডা এলাকায় দেখা যায়, সুমন নামে এক কিশোর ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক যাত্রী ডাকাডাকি করছে। বয়স জানতে চাইলে ১২ নাকি ১৪, ঠিকঠাক বলতে পারে না। তবে রিক্সা পার্কিং আর ডাকাডাকিতে অন্যান্য রিক্সাচালকের চেয়ে কোন অংশেই কম যায় না।
সুমন জানায়, রিক্সাটি তার বাবার হলেও বেশিরভাগ সময় সে নিজেই চালায়। সাঁতারকূল এলাকায় একটি প্যাডেলচালিত রিক্সা গ্যারেজ আছে। সেখানেই পার্কিংয়ের পাশাপাশি রাতে ব্যাটারি চার্জ দেয়। এক রাতে দুটি ব্যাটারি চার্জ দিতে ১২০ টাকা গুনতে হয়। মগবাজার এলাকায় দেখা যায়, বেশ কয়েকটি রিক্সার গ্যারেজ রয়েছে ওই এলাকায়। হাতিরঝিলের রাস্তা ঘেঁষে মগবাজারের একটি গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, মূলত প্যাডেলচালিত রিক্সার গ্যারেজে লাইট জ্বালানোর জন্য বিদ্যুতের লাইন নিয়েছেন তারা। কিন্তু একই গ্যারেজে লাইটের লাইন থেকে বাড়তি লাইন নিয়ে চার্জ দেয়া হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা।
এর আগে ২০২১ সালের মাঝামাঝি ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। হাইকোর্টের পক্ষ থেকেও বন্ধের নির্দেশনা আসে। তবে ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী দাবি করে বন্ধের বিপক্ষে দাঁড়ায় বেশ কিছু সংগঠন। আবার ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন মহাসড়ক ব্যতীত সর্বত্র চলাচলের অনুমতি দিয়ে রায় দেন সুপ্রীমকোর্ট।
বিদ্যুতের এই সঙ্কটের মুহূর্তে আবারও আলোচনায় আসে ব্যাটারিচালিত রিক্সা। গত ২৮ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ভবনের হলরুমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি রাস্তা-মহল্লা অটোরিক্সায় সয়লাব। একেকটা অটোরিক্সায় চারটি করে ব্যাটারি থাকে। সারাদিন চালানোর পর এগুলো সারারাত চার্জে রাখা হয়। এসব অটোরিক্সা বিদ্যুতবিধ্বংসী। এতে প্রচুর বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি এগুলোতে প্রচুর দুর্ঘটনাও ঘটছে। শহরে আগে প্রচুর পায়েচালিত রিক্সা চলত। এখনও চলে। আমরা তো পায়েচালিত রিক্সা বন্ধ করে দিচ্ছি না। যিনি অটোরিক্সা চালাতেন, তিনি পায়েচালিত রিক্সা চালাবেন। ডিএনসিসি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ডিন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ করা দরকার। এলাকা বুঝে গ্রামাঞ্চলে তিন চাকার ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু রিক্সার মতোই দেখতে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ করা উচিত। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণেই এসব বন্ধ করা সম্ভব হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত যেসব গাড়ি আছে, আমি এসবেরও পূর্ণ সমর্থন করি না। যদিও এসব পরিবেশবান্ধব বলে অনেকেই বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এটাও যেমন সত্য, আবার বিদ্যুতের ক্রাইসিস মুহূর্তে এগুলো বন্ধ রাখাও উচিত। অনুমোদন দেবে নাকি অবৈধ ঘোষণা করবে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যদি এসব নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা থাকত, তবে এত বিস্তার ঘটত না।
বৈশ্বিক সঙ্কটে বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অফিসে এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া, সভা ভার্চুয়ালি করা, অফিস সময় কমানোর পরিকল্পনা, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।