ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ

জলাবদ্ধতা থেকে এবারের বর্ষায়ও মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রামবাসীর

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৫ মে ২০২২

জলাবদ্ধতা থেকে এবারের বর্ষায়ও মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রামবাসীর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রাম নগরবাসীর। প্রায় পাঁচ বছর আগে কর্ণফুলীর সংযোগ খালগুলোর মুখে ৪০টি স্লুইসগেট নির্মাণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মাত্র ১০টির কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি ৩০টির মধ্যে ২৩টির কাজে কোন অগ্রগতিই নেই। তাই এবারের বর্ষাও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি যে মিলবে না, তা কদিন আগে ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া নগরীর চেহারা দেখলেই আঁচ করা যায়। অপরদিকে খালগুলোতে থাকা অস্থায়ী বাঁধ এবং বেশিরভাগ খালের মাটি অপসারণ না হওয়ায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি হয়েছে দ্বিগুণ। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোতে স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি খালে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। চউকের নেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্প পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ শাহ আলী জানান, মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার ও মহেশখালের মুখে এসব স্লুইসগেটের অবকাঠামোগত কাজ শেষ। এরমধ্যে খালের মুখে ফটকও বসানো হয়েছে মরিয়মবিবি ও কলাবাগিচায়। আর টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার এবং মহেশখালের জন্য ফটক আনা হচ্ছে। মহেশখালটিতে যে বড় পাম্প প্রয়োজন সেটি চলে এসেছে। অন্য চার খালের জন্য আটটি পাম্পের মধ্যে ৪টি এসেছে। বাকিগুলোও বন্দরে এসে পৌঁছেছে। কিছু যন্ত্রপাতি বহিনোঙরের জাহাজে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। তিনি আরও বলেন, কাজের অগ্রগতি বেশ ভাল। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেনাবাহিনীর বাইরে চউক নগরীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে বাঁধসহ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি জলকপাট নির্মাণের কাজ চলমান। এরমধ্যে ১০টি খালে স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ চললেও ইতিবাচক কোন বার্তা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই ও রাজাখালী খালে স্লুইসগেটের কাজের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বাকি বেশকিছু টেকনিক্যাল কাজ। তাই এবারও মুক্তি মিলবে না নগরীর বাসিন্দাদের। মূলত এই প্রকল্পের ৫টি খালের ভৌত অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালে অনুমোদিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেয়া প্রকল্পের আওতায় ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত ২৩টি খালের মুখে ¯ুøইসগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সে সবের মধ্যেও নতুন কোন সুখবর নেই। পাউবোর কাজে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল জানা গেলেও তারা স্বীকার করতে নারাজ। তবে তাদের ২৩টি খালের মুখে যেসব গেট নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে তারমধ্যে একটিও কাজ শেষ করতে পারেনি। যার ফলে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে গিয়ে আদৌ কত বছরে শেষ করতে পারে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এদিকে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালে এর কাজ শুরু হয়। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল মিলছে না বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের। এক পশলা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়ে চট্টগ্রাম। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের কষ্ট ও দুর্দশা অবর্ণনীয়। জলাবদ্ধতার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে নয় হাজার কোটি টাকা হলেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বলছেন, ৬৭ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, পুরোপুরি শেষ হলে মিলবে সুফল। নগরীর ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। চট্টগ্রামবাসীর আতঙ্ক ভারি বর্ষণ ॥ চলতি মওসুমে টানা বৃষ্টিতে কী পরিমাণ দুর্ভোগে পড়তে হবে তা আঁচ করতেই নগরবাসীরা শিউরে উঠছেন। চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাজিদ জানান, বাসা বাড়ি থেকে পানি কমছে না। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এই কষ্ট কমবে না। স্লুইসগেটের কাজ কী জানি না। তবে পানি কোনভাবেই কমবে না। কেননা কোন খালেই জায়গা নাই। সব কাজ অগোছালো। যার ফলে বাসাবাড়ি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে জোয়ার ও খাল নালার পানি ঢুকে পড়ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো নিয়েছে চউক। তাড়াহুড়ো করে মনগড়া সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শুরু করায় নগরবাসীর ভোগান্তি অন্ত নেই।
×