ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনার চেয়ে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বেশি

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

দেশে করোনার চেয়ে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বেশি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে করোনায় বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের চাইতেও বেশি মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক বিভিন্ন রোগে। এক গবেষণার প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, দেশে মোট মৃত্যুর অন্তত ৭০ শতাংশ হচ্ছে অসংক্রামক বিভিন্ন রোগে। শুধু ধূমপানজনিত কারণেই দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ মানুষের। তাই এ বিষয়ে এখনই গুরুত্ব না দিলে আগামী ২০ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি বলা হচ্ছে, মোট মৃত্যুর ৮০ শতাংশই হতে পারে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে। বৃহস্পতিবার প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে এসব কথা জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান। সম্মেলনের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, কোভিডে সারা বিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্যু, অসংক্রামক কোন কোন রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। ক্যান্সার, টিবি, হার্ট ডিজিস সবই অসংক্রামক রোগ এবং এগুলোর যে মৃত্যুর হার, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে তা কোভিডের তুলনায় ৫ গুণ। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রমক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাদের শুধু ইনসুলিনের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্য বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার টিকার জন্য এবার সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে, সেখান থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে আমরা যদি হিসাব করি, তাহলে ১০ ভাগের কাছাকাছি হবে। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬৭.৫ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারী কর্মচারী রয়েছেন, তাদের জন্য সরকার প্রতিমাসে হেলথ এ্যালাউন্স দিয়ে থাকে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এটির পরিমাণও ৬ হাজার কোটি টাকা। এটি কিন্তু হিসাবে আনা হয় না। সবকিছু হিসাবে আনলে হয়ত সরকারের অংশগ্রহণ আরও বেশি হতো। তিনি বলেন, থোক বরাদ্দ দিয়ে সরকার চলমান অর্থবছরে কোভিডের কারণে যা খরচ করেছে, সেটি গণনা করলে সরকারের অংশগ্রহণ অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কোন কার্পণ্য নেই। যা বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে, আমরা তা সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি না। এদিন বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) একটি নতুন ও চলমান বোঝা। ডায়বেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার রোগী উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকার অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে। হৃদরোগের চিকিৎসায় গত দুই দশকে অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নারে ৫টি ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন হিসাবে নগর স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আমাদের, এনসিডির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা সিটিতে পার্ক ও ফুটপাথ স্থাপন করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তবে আমরা আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে কাজ করছি। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দুটি হাসপাতাল আছে, সেগুলোর উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ হতে কাজ করছে সরকার। দ্বিতীয় পর্বে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ডাঃ মিথিলা ফারুখ, অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম, সানজিদা বিনতে আলী, আন্তর্জাতিক স্পীকার ডাঃ কিংসলে এ্যাঘো, বিলকিস বানু, নাভিরা আবতাবী বিনতে ইসলাম, খোন্দকার ফাতেমা। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআরবি’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির বৈজ্ঞানিক সেক্রেটারি ডাঃ আলেয়া নাহিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ডায়বেটিস নীরব ঘাতক। এটি প্রতিরোধ করতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
×