ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিসি ॥ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২৫ শিক্ষার্থী আহত

শাবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

শাবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার রাতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষাথীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী। এদিকে রাত ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে বিক্ষভ করছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছে। পুরো এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে (আইসিটি) অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছে উপাচার্যকে উদ্ধার করতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্র্জ করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এই সময় শাবি ছাত্রলীগ কর্মীরা উপাচার্যকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে পুলিশ তাদেরকেও লাঠিচার্জ করে। পুলিশ একপর্যায়ে গুলি ও টিয়ার শেল দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রবিবার সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে পুলিশ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। বিকেল ৪টায় আইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষভের মুখে পড়েন তিনি। সেই ভবনের কলাপসিবল গেট আটকে দিয়ে উপাচার্যকে ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষাথীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি রক্ষায় ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে না নেয়ার আগ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষভ করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রীরা। দফায় দফায় তাদের এই আন্দোলন চলছে। তাদের সঙ্গে আরও শিক্ষার্থী একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আন্দোলনরত সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষাথীরা ফের আন্দোলনে নামে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেন। আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে কিছু সংখ্যক ছাত্রও এসে কর্মসূচীতে যোগ দেন। এই অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের বিক্ষভস্থলে আটকা পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা এসে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনার পর শিক্ষাথীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষভ শুরু করে। তবে হামলার অভিযোগ অশ্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতা আশরাফ কামাল আরিফসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, এ্যাম্বুলেন্সকে পথ করে দিতে গেলে তারা (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা) বাধা দেয়। তখন এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। শুক্রবার তিন দফা দাবিতে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষাথীরা। হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, হলের ভেতরের অব্যবস্থাপনা দূর করা ও অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব হল প্রভোস্ট নিয়োগের দাবিতে তারা এই অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত তারা বিক্ষভ করলেও হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কোন দাবি-দাওয়া আমলে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের পাশের এক কিলো সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আন্দোলনের মুখপাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রশাসন এখন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন চলবে। তারা বলেন, আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দিতে সকল ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তিন দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
×