ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোল্লাহাটে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ভূগছে শিশু আরাফাত

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৮ জানুয়ারি ২০২২

মোল্লাহাটে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ভূগছে শিশু আরাফাত

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা গ্রামের ভ্যান চালক কবির মোল্লার শিশু সন্তান ৩ বছর ৪ মাস বয়সী শিশু আরাফাত অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা। ক্রমশ: তার মাথার আকার ও ওজন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ৩ বছরের অধিককাল বাড়িতে প্রায় বিনা চিকিৎসায় জটিল রোগে ভূগছে শিশুটি। এখন তার শরীরের চেয়ে মাথার ওজন বেশী। সুস্থভাবে জন্ম নেয়ার পর মাত্র আড়াই মাস বয়সে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। তখন তাকে প্রথমে নেয়া হয় গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে। সেখানে উন্নতির স্থলে আরো অবনতি হলে চিকিৎসকরা ৪দিন পর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হসপাতালে রেফার্ড করেন। শিশুর দ্রুত সুস্থতার আশায় খুমেকে না নিয়ে খুলনায় প্রাইভেট ক্লিনিকের মাধ্যমে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এন, বারুরীকে দেখান। সেখানে ৪দিনের চিকিৎসায় ২০/২২ হাজার টাকা শেষ হয়। তবু সুস্থ না হওয়ায় এবং আর কোন টাকা খরজের সংগতি না থাকার বিষয়টি জেনে ডাঃ বারুরী ভর্তি করে দেন খুমেক হাসপাতালে। খুমেকে চিকিৎসা চলে ২৯ দিন। উক্ত সময়ের মাঝে অনেক প্রকার পরীক্ষায় যা কিছু ব্যয় হয়েছে সবই এনজিও ঋণ ও ব্যক্তি নিকট খেকে ধার-দেনার মাধ্যমে। এখানেও সুস্থ হয় না। বরং তার মাথার আকৃতি কেবল বাড়তে থাকে। অবশেষ মেডিকেল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় বিদেশে অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার। তার মাথায় পানি জমেছে, যার অপারেশনে অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যায় হবে বলেও ওই সময়ে (৩ বছর পূর্বে) ধারণা দেন চিকিৎসকরা। এরপর থেকে গত তিন বছরের অধিক সময় বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ভূগছে অবুঝ শিশু আরাফাত। তার শরীরের চেয়ে মাথার ওজন বেশী (শিশুর বাবার ভাষ্যমতে অন্তত ১০ কেজি), সুস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় এখন শিশুর মাথার ওজন ২ কেজি থাকার কথা। যে, শিশু এখন খেলবে ও দৌড়াবে, সে আজ মাথার ওজন নিয়ে দাড়াতে এমনকি বসতেও পারছে না। ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে মাথার ওজন ও আকার। অসহায় বাবা-মা অর্থের অভাবে কেবল তেল-পানি পড়া ব্যবহার করছেন। যাতে কোন উন্নতি হয় নাই, তবু এ যেন তাদের সন্তানকে বাচানোর এক সংগ্রাম। শিশুটির পিতা কবির মোল্লা জানান, তার ৪ সন্তানের মধ্যে আরাফাত তৃতীয়, এছাড়া নিজেরা (স্বামী-স্ত্রী) ও বৃদ্ধা মা-সহ ৭/৮ জনের সংসার অনেক কষ্টে চলে এক মাত্র ভ্যান চালিয়ে। তিনিও চান অন্য শিশুদের মত তার সন্তান সুস্থ্য হয়ে উঠুক। কিন্তু কেবল টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই তিনি সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন, যাতে তার শিশু পুত্রকে চিকিৎসা করাতে পারেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, শিশু নিউমোনিয়া (হাইড্রোক্যাফালাস) আক্রান্ত হয়ে মাথায় পানি জমে মাথা ফুলে গেছে। ঢাকা (বিএসএমএমইউ) বা উন্নত দেশে চিকিৎসা করালে শিশুটি সুস্থ্য হতে পারে। এখন যদি চিকিৎসা না করায় আস্তে আস্তে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকবে। শিশুটির মা মুর্শিদা বেগম বলেন, জন্মের আড়াই মাস বয়সে আমার আদরের ছেলে আরাফাত অসুস্থ। এর পর থেকে তার মাথার ওজন বাড়তে থাকে। শরীর থেকে মাথার ওজন বেশী হওয়ায় সে বিছানায় শুয়ে থাকে। একালাবাসী বলেন, শিশুটির চিকিৎসা করা সম্ভব যদি সরকার এবং সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসে। শিশুটি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা সবার। মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, শিশুটির চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আমরা সাধ্য অনুসারে চেষ্টা করবো। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
×