ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ব্যঙ্গচিত্র

সড়কে অনিয়মের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

সড়কে অনিয়মের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন শিক্ষার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং রাস্তায় চলমান অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খিলগাঁও মডেল কলেজ, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ফয়েজুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে সড়কের সব অনিয়মের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও প্রগতি সরণির এক পাশে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দেন। শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং রাস্তায় যে লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা শনিবার কর্তৃপক্ষকে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। ফুটবল খেলায় যেমন কোন খেলোয়াড় ফাউল করলে রেফারি লাল কার্ড দেখায়, তেমনি আমরা শনিবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে রেফারির ভূমিকায় নেমেছি। বাংলার মাটিতে দেশের ছাত্র সমাজ কখনও দুর্নীতি মেনে নেবে না। তাই আমরা সড়কের সঙ্গে যত লুটপাট ও দুর্নীতি যুক্ত তার বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। আপনি শিক্ষার্থী নন এবং বাম রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনেকে দাবি করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। আমি নাকি শিক্ষার্থী নই, আমার বয়স নাকি ৩০ বছর, আমি নাকি আন্দোলনের উসকানি দিচ্ছি। এসব মিথ্যা কথা। আমি এবার খিলগাঁও মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তবে হ্যাঁ, আমার ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটার সঙ্গে এ আন্দোলন সংশ্লিষ্ট নয়। আমি আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন করছি। আমি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা মহানগরের দফতর সম্পাদক- এ কথা বলতে কোন সমস্যা নেই। দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অনেকে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও চেক করেন। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের লাল কার্ড দেখানো হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অভিনব এ তোয়াক্কা করছেন না। চালক-হেলপার বরং তাদের কেউ কেউ হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন। যেন তাদের কাছে এসব কিছুই না। এক চালককে লাল কার্ড দেখানোর ফলে ওই চালকের ভঙ্গিমা দেখে এক যাত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ নির্লজ্জ। এমন প্রতিবাদে চালকরা আরও মজা পাচ্ছেন। দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে লাল কার্ড প্রদর্শনী কর্মসূচী শেষে নতুন কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়। সোহাগী সামিয়া বলেন, আজকের শনিবার মতো আমাদের কর্মসূচী এখানেই শেষ। আমরা আবার আগামীকাল (রবিবার) দুপুর ১২টায় রামপুরা ব্রিজের ওপর মানববন্ধন করব। মানববন্ধনে সড়কের অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের প্রত্যেকের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করব। এছাড়া আমাদের অভিভাবকসহ সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য। দুপুর ১টার দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরে পোস্টার হাতে সেখানে দাঁড়ান তারা। এতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কিছু সময় অবস্থান কর্মসূচী পালন করে সেখান থেকে চলে যান শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে রামপুরা ব্রিজে মানববন্ধন করে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। নয় দফা দাবিতে রবিবার শাহবাগ থেকে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করবে তারা। ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়ক অবরোধ ॥ টঙ্গি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাসে হাফ ভাড়া ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিচার, ক্ষতিপূরণ ও টঙ্গী সফিউদ্দিন স্কুলের সামনের সড়কে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে টঙ্গী কলেজ গেটের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-টঙ্গী গাজীপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টার পর শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে রাস্তায় নামেন। এ সময় দুদিকে চলাচলকারী সব যান চলাচল ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীদের একাংশ সকল যানবাহন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে থাকেন। যাদের লাইসেন্স ঠিক আছ, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। যাদের লাইসেন্স ঠিক নেই, তাদের গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়া হয়। তবে এ্যাম্বুলেন্স, দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার ছেড়ে দিতে দেখা গেছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধের ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন টঙ্গী পূর্ব পশ্চিম থানার ওসি জাবেদ মাসুদ। তিনি ও পুলিশের অন্য সদস্য শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার ও মীমাংসার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা তা শুনেনি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় শতাধিক গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। পরে গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ইলতুৎমিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের আশ্বাস দেন, তাদের দাবির কথা সংশ্লিষ্টদের জরুরীভাব জানানো হবে। তারপরও শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তাৎক্ষণিক রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা অন্যান্য পুলিশ সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করেন এবং বলেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, ধৈর্যের ফল শুভ হয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা কৌশলে নানা কথাবার্তা বলে দুপুরের আগেই রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তবে রাস্তা অবরোধের ফলে মহাসড়কে শত শত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব শ্রেণীর গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরসহ ২০টি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব শ্রেণীর গণপরিবহনে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সুবিধা নিয়ে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ, শিক্ষার্থীদের পরিবহনে অস্বীকৃতি জানালে, হাফ ভাড়া না নিলে, সংশ্লিষ্ট পরিবহনের চালক, সহকারী, কাউন্টারম্যান, টিকেট বিক্রয়কারীর কী শাস্তি হবে, তা স্পষ্ট করে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি, সব শ্রেণীর গণপরিবহন দৈনিক চুক্তিতে ইজারা দেয়া বন্ধসহ ২০ দফা দাবি জানানো হয়।
×