ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লালমনিরহাট সদর হাপাতালে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি ॥ বিপাকে রোগীরা

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ২৫ নভেম্বর ২০২১

লালমনিরহাট সদর হাপাতালে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি ॥ বিপাকে রোগীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলা সদরের আড়াই শত শয্যার আধুনিক হাসপাতালটি নামের যথাযথ মর্যাদা রাখতে পারেনি। চিকিৎসা সেবা তলানিতে এসে পড়েছে। প্রকাশ্যে অফিস চলাকালিন ও আউটডোরে চিকিৎসকরা রোগী দেখার সময় সকাল ৯ টা হতে দুপুর দুই টা পর্যন্ত হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভটের অপতৎপরতা সকলের নজর কারবে। রোগী ও রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের দেখিয়ে বাহিরে এলেই ঘিরে ধরে রাখে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভগণ। তারা রোগীকে কি ঔষধ চিকিৎসক লিখছেন সেটি দেখেন। রোগীকে দেয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রটি ছবি তুলে কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় রোগী ও রোগীর স্বজনদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। রোগী ও রোগীর স্বজনরা থাকে মহা বিপাকে। এমন কি জরুরি বিভাগে কোন মারাতœক মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কোন রোগী আসেন। তখন চিকিৎসকরা হাসপাতালে সরবরাহ নেই। এমন ঔষধ বাহির হতে কিনে আনতে বলেন। রোগীর স্বজনরা তখন প্রতিমূহুর্তের অনেক দাম। সেই ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভ গণ মৃত্যু পথযাত্রী ঝুঁকি নিয়ে আসা রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভদের এমন দৌরাতেœ মহা বিপাকে পড়েছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। জানা গেছে, লালনিরহাট জেলার সদর হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভদের প্রকাশ্য দৌরাত্মে দেখা গেছে, কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দিলে টানা টানি শুরু করে দেয় দালালরা। হাসপাতলটিতে ডিজিটাল এক্সে মেশিন থাকলেও নষ্ট হয়ে আছে বছর ধরে। সকল ধরনের মল, মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা হয় না। হাসপাতালে বসে একটি বেসরকারি প্যাথলজির মালিক কাম হাসপাতালের ল্যাবটেকনিশিয়ান মূল্যের বিনিময়ে সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে দেয়। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চরমে। নেই কোন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মেডিক্যাল অফিসার। জরুরি বিভাগের ৫টি পদই শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে। হাসপাতালের সরকারি ষ্টোরের ঔষধ চুরির ঘটনা, হাসপাতালের ঔষধের ষ্টক বইয়ে অভার লেপিং, আউটডোরের রোগী দেখার স্লীপের টাকা তুলে জমা না দিয়ে আতœসাৎ করার ঘটনায় সহ নানা দূর্নীতির ঘটনা তদন্তের নামে ধামাচাপা পড়ে গেছে। দুদুক তন্ত শুরু করে রহস্যজনক কারণে থেমে গেছে। হাসপাতালটিতে সরকারের ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননা করে বহাল তবিয়েতে থাকা যায়। একটি সূত্র দাবি করেছে কয়েক কোটি টাকার করোনা ও নানা বিষয়ের হাসপাতালের অর্থ অতিরিক্ত বিল করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। সেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের তত্বাবোধায়ক অবসরকালীণ ছুটিতে চলে যাওয়ায় হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ও হাসপাতাল হতে বদলি নিযে অন্যত্র চলে গেছে। অবৈধ বিল উত্তোলন কে বৈধতা দিতে এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসক এমএ মুকুল জানান, পৃথিবীর কোন দেশে হাসপাতল চত্বরে ঔষধ কোম্পানির এমন দৌরাতœ নেই। করোনা পরিস্থিতি মানুষকে দূরে দূরে থাকতে বলছে। সে জায়গায় হাসপাতাল চত্বরের আউটডোরে যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের ঘিরে ধরে ব্যবস্তাপত্র দেখছে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টটিভরা। এতে যদি একজন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। তাহলে এই রিপ্রেজেন্টটিভদের মাধ্যমে সেই দিনে সকলে করোনায় সক্রামিত হবে। এই আচরণে এই মূহুর্তে তারা সকলে মহা বিপাকেও বটে মহা ঝুঁকিতে আছে। কোম্পানির ঔষধ রোগীকে লিখেছে কি'না চিকিৎসক সেটাই দেখতে এমন ভীড় করছে। এই ঔষধ লেখার পার্সেন্টেজের উপর নির্ভর করে চিকিৎসক গণ প্রতিমাসে একটা হ্যান্ডসাম অর্থ ও নানা উপহার সামগ্রী এবং সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। সবার অর্থ উপার্জনের কত সিষ্টেম চালু করে রেখেছে। শুধু কৃষকের ফসল উৎপাদন করে অর্থ উপার্জনের কোন লাভজনক সিষ্টেম চালু নেই। কৃষক শস্য উৎপাদন করে আনুমানিক মূল্যের উপর নির্ভর করে। উৎপাদন খরচ উঠতেও পারে নাও পারে। চিকিৎসক হিসেবে তিনি বলেন, একটি দেশের স্থায়ী উন্নয়ন তখনি স্থায়ী হয় যখন স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ে ও খাদ্যশস্যের ন্যায় দাম কৃষক পায়। সেই সাথে দেশের নাগরিকের যখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হয়। খাদ্যে ও স্বাস্থ্য সেবায় এমন অব্যবস্থাপনা টিকসই উন্নয়নে এই মূহুর্তে বড় বাধা গুলোর একটি।
×