ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারের নামে সাড়ে ১১শ’ অফিসার-সৈনিককে হত্যা করেছিল জিয়া

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৮ নভেম্বর ২০২১

বিচারের নামে সাড়ে ১১শ’ অফিসার-সৈনিককে হত্যা করেছিল জিয়া

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস উপলক্ষে ‘১৯৭৭ সালে খুনী জিয়ার গুম ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। এ সময় একই দাবিতে আজ সোমবার সকাল ১০টায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। খবর অনলাইনের। সভা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়। সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছলে থামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে দিনের কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতাকালে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) বলেন, জিয়াউর রহমানের নির্দেশে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের একটাই অপরাধ ছিল- তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তারা বাংলাদেশকে ভালবাসতো। এরা বেঁচে থাকলে খুনী জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। জিয়া যাকেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছেন, নিজের অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার পথে বাধা ভেবেছেন, তাকেই খুন করেছেন। ১৯৭৭ সালে জাপানী বিমান ছিনতাইয়ের পর ঢাকায় অবতরণের ঘটনায় নীলনক্সা করে বিচারের নামে প্রায় সাড়ে ১১শ’ অফিসার- সৈনিককে হত্যা করেছেন জিয়া। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে মায়া আরও বলেন, সেই সময় জেলখানায় প্রতি রাতেই ২০-২৫ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতো। সময় স্বল্পতার কারণে একসঙ্গে দু’জনকে ফাঁসিতে ঝোলাতো তারা। ১০-১২ মিনিট ঝুলিয়েই নামিয়ে ফেলা হতো। পরে সেখানেই ময়নাতদন্ত করা হতো। রাত ১টার দিকে একের পর এক আসামিকে ফাঁসি দেয়া শুরু হতো, চলত ফজর পর্যন্ত। আমরা যারা জেলে ছিলাম তারা রাত জেগে গুনতাম আজ এতজনের ফাঁসি হলো, কাল অত। কোনদিন কার আর কতজনের ফাঁসি হবে তা নির্ধারণ করতেন জিয়া। খুনী জিয়া এক হাতে নাস্তা খেতেন আরেক হাতে ফাঁসির তালিকায় সই করতেন। এই হলো জিয়াউর রহমান। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, আমার সত্যি ঘৃণা হয় জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করতে। কারণ তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংস খুনীদের একজন। জিয়া শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, জাতীয় চার নেতা কিংবা সাড়ে ১১শ’ মুক্তিযোদ্ধাকেই হত্যা করেননি, হত্যা করেছেন বাংলাদেশকেই। জিয়া কখনই বাংলাদেশকে বিশ্বাস করেননি, কখনই বাংলাদেশকে চাননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গে থেকে পাকিস্তানের চর হিসেবে কাজ করেছেন। ’৭৫ এর আগস্টের পর অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন ঘড়ির কাঁটা উল্টে দিতে, অর্থাৎ বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। মানিক বলেন, আমার একটাই দাবি, জিয়ার মরণোত্তর বিচার হতে হবে। এর কোন বিকল্প হতে পারে না। জিয়ার মরণোত্তর বিচারে ৩টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি আমি। একটি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার ঘটনায়, একটি জেলহত্যার জন্য আরেকটি সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনায়। ১৯৭৭ সালে গণফাঁসির শিকার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের আপনজনদের উদ্দেশে শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি এসেছি আপনাদের কথা শুনতে। আমি জেনেছি আপনারা একটা আন্দোলন শুরু করেছেন প্রিয়জনের মৃত্যুর বিচারের জন্য। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। তবে ন্যায়বিচারের প্রয়োজন নাই, বিচার করলেই যথেষ্ট। কারণ বিচার মানেই ন্যায়বিচার। একজনের বুকে এত কষ্ট থাকতে পারে এত যন্ত্রণা থাকতে পারে, এত ক্ষোভ থাকতে পারে নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না। তিনি বলেন, সে সময় যারা ফাঁসি দিয়েছে তারা অবৈধ সরকার, আর যারা অবৈধ সরকার উৎখাত করতে চায় তারাতো আর অপরাধী হতে পারে না। ১৯৭৭ সালে বাবা হারানো কয়েকজন বলেন, আমাদের বাবারা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানী বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরবর্তীতে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমান একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করেছেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। কোন প্রকার ধর্মীয় সৎকার ছাড়াই লাশগুলো ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেয়া হতো। এছাড়া নিহত কয়েকজনকে কুমিল্লার টিক্কারচর কবরস্থানে মাটিচাপা দেয়া হয়। সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের কথিত বিচারে ফাঁসি হওয়া ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু এই ঘটনার জেরে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১৪৩ জন, তেমনি কারাদ- ভোগ করেছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর আড়াই হাজার সদস্য। তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবী নিয়োগের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। অথচ এই মানুষগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। এছাড়াও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অবঃ) হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক, ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ এজাহার খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসসহ অনেকে।
×