ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের ডাক ॥ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২০ অক্টোবর ২০২১

ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের ডাক ॥ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ধর্মান্ধ ও উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে। যতদিন না এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত আমরা ভেঙ্গে দিতে পারব ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবেলা করে তাদের ‘সমুচিত জবাব’ দিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছে। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের ভয় নাই, শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে আছে। হামলাকারীরা রেহাই পাবে না, শাস্তি তাদের পেতেই হবে। দেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার দেশব্যাপী ‘স¤প্রীতি সমাবেশ ও শান্তির শোভাযাত্রা’ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিশাল সম্প্রীতি সমাবেশ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তির শোভাযাত্রা বের করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় পৌনে দুই বছর পর রাজধানীতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক শোডাউন করল ক্ষমতাসীন দলটি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা প্রতিরোধ করব। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের ভয় নাই। শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে আছে। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ বিএনপি আজ সা¤প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। এটা মুখ বুঝে সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, আজকে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ- এগুলো ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি সরকার যে নির্যাতন চালিয়েছিল, বর্তমান ঘটনা তারই পুনরাবৃত্তি। আবার নতুন করে সা¤প্রদায়িক হামলা-সন্ত্রাস শুরু করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে প্রত্যেকটি দুর্গাপূজায় হাজার হাজার পূজামণ্ডপে পূজা চলেছে। কোন ঘটনা ঘটেনি। হঠাৎ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়ে নাই। সা¤প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে আজ স¤প্রীতি সমাবেশ হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে। যতদিন না এই সা¤প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত আমরা ভেঙ্গে দিতে পারব ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে, রাস্তায় থাকবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে মুসলমান আছে, তাদের জানমালের কথাও আমাদেরকে ভাবতে হবে। হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা এবং সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের যে উস্কানি দেয়া হচ্ছে, তাতে ভারতের একটা বড় অংশ মুসলমানদের জীবনকেও বিপন্ন করে ফেলছে। সা¤প্রদায়িক অপশক্তির মোকাবেলা করে তাদের ‘সমুচিত জবাব’ দিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সারাদেশে ‘প্রস্তুত আছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখবই। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বসবাস করবে। যারাই সন্ত্রাস করবে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। জবাব দিতে হবে তাদের, কেন তারা সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করছে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সা¤প্রদায়িক এই হামলায় যারাই জড়িত, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এরই মধ্যে সরকার খুব কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। অসা¤প্রদায়িক এই বাংলাদেশে কোন সা¤প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, তারা (বিএনপি-জায়ামাত) জানে যে ভোটের মাধ্যমে এই সরকারকে পরাজিত করতে পারবে না। এজন্য এই ধর্মীয় উš§াদনা সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে সা¤প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা দেখার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য ৩০ লাখ শহীদ আত্মাহুতি দেননি। যে সমস্ত মৌলবাদী, ধর্মান্ধ এখনও ধর্মের দোহাই দিয়ে একাত্তরের মতো সমাজে সা¤প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, যারা এখনও ঘর-বাড়ি জ্বালাচ্ছে, তাদেরকে আমরা একাত্তরের মতোই প্রতিহত করে অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ব। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, স¤প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সারাদেশে সতর্ক রয়েছে। এই অপশক্তিকে উৎখাত না করার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগ্রাম চলতে থাকবে। সম্প্রীতি সমাবেশ শুরু হয় বেলা ১১টায়। সেখানে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে আরও অংশ নেন- অওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সানজিদা খানম, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এতদিন রাজনৈতিক কর্মসূচী চার দেয়ালের ভেতরে চলে গিয়েছিল। প্রায় পৌনে দুই বছর পর এই সম্প্রীতি সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে বড় জনসমাগমের কর্মসূচী পালন করল আওয়ামী লীগ। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরুর সময় নির্ধারণ করা হলেও এর আগেই উপস্থিতির পরিধি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আশপাশের সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
×