ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গলাচিপায় ঝুলে আছে ফায়ার সার্ভিস কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১৮ অক্টোবর ২০২১

গলাচিপায় ঝুলে আছে ফায়ার সার্ভিস কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ ভবন নির্মাণ শেষ। অগ্নি নির্বাপন গাড়ি এসেছে। প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সবকিছুই প্রস্তুত। তারপরও চালু হচ্ছে না পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কার্যক্রম। কেবলমাত্র গাড়ি চলাচলের রাস্তা না থাকায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থায় ঝুলে আছে। রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গলাচিপা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। তাই রাস্তা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এভাবে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম ঝুলে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলাবাসী। চোখের সামনে একের পর এক অগ্নিকান্ডে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও মানুষ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ২০১৭ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১৫৬ জেলা-উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে একই বছরের অক্টোবর মাসে গলাচিপা উপজেলা সদরের পুরোনো লঞ্চঘাট সড়কের পাশে ৩৩ শতক জমির ওপর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগ ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীরসহ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে। এরপরই শুরু হয় রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত জটিলতা। গণপূর্ত বিভাগ বারবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝে নেয়ার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু অগ্নি নির্বাপন গাড়ি চলাচলের রাস্তা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ স্টেশন ভবন বুঝে নেয়ার কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের হওয়ায় বিষয়টি রশি টানাটানির পর্যায়ে চলে যায়। স্টেশন ভবন নির্মাণ কাজ দেড় বছরেরও আগে সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে স্টেশন চালুর সব কাজ শেষ হয়েছে। অথচ স্টেশনের কার্যক্রম ঝুলে আছে। এবিষয়ে নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নিজামউদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় শ্রেনীর গলাচিপা ফায়ার স্টেশনের জন্য ইতোমধ্যে দুটি অগ্নি নির্বাপন গাড়ি এসে গেছে। ফায়ারম্যান, গাড়ি চালক, স্টেশন অফিসার, লিডারসহ অধিকাংশ জনবল পোস্টিং হয়েছে। আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স অচিরেই আসবে। অর্থাৎ সব প্রস্তুতি শেষ। কিন্তু ফায়ার স্টেশনের সামনের সড়কটি একদিকে ভাঙ্গাচোড়া। অন্যদিকে অপ্রশস্ত। এ সড়ক দিয়ে কোনমতেই গাড়ি চলবে না। স্টেশনটি বুঝে নিলেও কেবলমাত্র রাস্তার জন্য জনসেবা দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ ও গলাচিপা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পৌরসভা দ্রুত সড়কটি নির্মাণ করলে ফায়ার স্টেশন বুঝে নিয়ে সেবা কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারুণ অর রশিদ বলেন, ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনও বুঝিয়ে দেয়া যায়নি। গাড়ি যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি পৌরসভার এবং সড়ক নির্মাণে আমাদের বরাদ্দ না থাকার বিষয়টিও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে গলাচিপা পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, পৌরসভা থেকে ফায়ার স্টেশনের পুরোনো রাস্তাটি নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পৌরসভা থেকে এ সড়কটি পুরোনো লঞ্চঘাটে শেষ হবে। প্রায় দেড় কিলোমিটার আরসিসি সড়ক এবং ড্রেন নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এভাবে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে রশি টানাটানি ও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় গলাচিপাবাসী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলায় প্রায়শ অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সব ব্যবস্থা সম্পন্নের পরেও কার্যক্রম না থাকায় চোখের সামনে আগুনে সব কিছু পুড়ে গেলেও জনগণ অসহায়ের মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
×