ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তির জন্য শক্তি

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১৩ অক্টোবর ২০২১

শান্তির জন্য শক্তি

অস্ত্র দিয়ে মানব হত্যা করা যায়, আবার অস্ত্রের সাহায্য নিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষাও করা যায়। এটি ব্যবহারকারীর অভিপ্রায়ের ওপরেই নির্ভর করে। পরমাণু বোমার কথা আমরা জানি। পরমাণু শক্তি দিয়ে মুহূর্তে লাখ লাখ মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া সম্ভব। আবার সেই পরমাণু শক্তি দিয়ে কোটি মানুষের অন্ধকার ঘর আলোকিত করাও অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে। তাই বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি যে ধ্বংস নয়, শান্তির জন্যই ব্যবহৃত হবে সেটি অনুমান করতে কষ্ট হয় না। রবিবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সেকথাই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, পরমাণু শক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আজকে জায়গা করে নিতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আজকে স্থান করে নিল, সেটা শান্তির জন্য। পরমাণু শক্তি আমরা দেশের শান্তির জন্য ব্যবহার করব। বলা দরকার, রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর প্রচুর নেতিবাচক কথা শোনা গেছে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশে অনেকে না জেনে সমালোচনা করেন। আমাদের দেশে একটু কিছু করতে গেলেই সমালোচনা হয়। নানাভাবে না জেনে, কেউ না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলে, অনেকে অনেক কথা লিখে ফেলে। টকশোতে কত কথা। সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখানে নেয়া হয়েছে ৩ থেকে ৪ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের কাছে বা এর ভেতরে যারা কাজ করবেন তাদেরও অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে পুরো এলাকাটিরও নিরাপত্তার যে প্রয়োজন, তা পূরণ করা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতেই রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তি করা হয়েছে। অধুনা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে পরিবেশ দূষণ হয় না বললেই চলে। কারণ, সেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটারও খুব একটা সুযোগ থাকে না। এসব বিষয় শতভাগ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২শ’ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও ১২শ’ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। যা চাহিদা মেটানোয় বড় ভূমিকা রাখবে। মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বিদ্যুত। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি আরও ত্বরান্বিত করতে চাইলে আরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রয়োজন। তাই দেশে দ্বিতীয় পরমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। যেটি স্থাপিত হবে দক্ষিণাঞ্চলে।
×