ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইভ্যালির গুদাম থেকে কয়েক কোটি টাকার পণ্য বিক্রির অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ইভ্যালির গুদাম থেকে কয়েক কোটি টাকার পণ্য বিক্রির অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার ॥ বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেদিন রাতেই প্রতিষ্ঠানটির সাভারের ওয়্যারহাউস থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইলসহ বেশ কিছু পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ উঠছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বড় ভাই ও কর্মচারী যোগসাজশ করে প্রায় কয়েক হাজার মোবাইল সরিয়ে সেগুলো সাভারের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে বিক্রি করে দিয়েছে, যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। সূত্র জানায়, সাভারের আমিনবাজার ও বলিয়ারপুর এলাকায় দুটি ওয়্যারহাউস রয়েছে। যেখানে ইভ্যালির বিভিন্ন পণ্য রাখা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেলের বাড়ি সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের বলিয়ারপুরের টেকেরবাড়ি এলাকায়। প্রায় ছয় মাস আগে ইভ্যালিতে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন ধামরাইয়ের বাসিন্দা আহাদ নামে এক গ্রাহক। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে আমি জানতে পারি ইভ্যালির সাভারের ওয়্যারহাউস থেকে পণ্য সরিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে সেদিন রাতে আমার পণ্য পেতে সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি এলাকায় ইভ্যালির প্যাকেজিং সেকশনের দায়িত্বে থাকা মোজাম্মেলের শ্বশুরবাড়িতে যাই। এ সময় তার ঘরের ভেতরে ৪০ থেকে ৫০ কার্টন ভর্তি আইফোন ও রিয়েলমি ব্যান্ডের মোবাইল দেখতে পাই। তিনি আরও বলেন, সে সময় আরও ১০ থেকে ১৫ জন গ্রাহক ছিল। আমরা আমাদের পণ্য চাইলে মোজাম্মেল আমাদের শনিবার পর্যন্ত সময় চেয়ে তাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের ব্যবস্থা করবে বলে জানান। এরপর থেকে মোজাম্মেলের মোবাইল বন্ধ রয়েছে। পরে রবিবার রাতে আবার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই মোজাম্মেল এবং ঘর ভর্তি সেই মোবাইল ফোনের কার্টনও নেই। এর আগে বাসায় হাজির হওয়া গ্রাহকদের ইভ্যালির কর্মকর্তা পরিচয়ে জাহাঙ্গীরের মোবাইল নাম্বার দেয় মোজাম্মেল। কিন্তু পরে জানা যায় জাহাঙ্গীর ইভ্যালির কেউ নন বরং মোজাম্মেল জাহাঙ্গীরের বোনের স্বামী। মোজাম্মেলের স্ত্রীর বড় বোন বলেন, যে দিন ইভ্যালির রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন গ্রেফতার হন সেদিন রাত দুইটারদিকে একটি মাইক্রোবাস ও লেগুনায় করে মোবাইল ভর্তি ৪০ থেকে ৫০টি কার্টন নিয়ে আসে। পরের দিন শনিবার বিকেলে ইভ্যালির মালিকের বড় ভাই ও কর্মচারীরা এসে বাসা থেকে আবার সেই কার্টনগুলো নিয়ে গেছে। তবে তারা সেগুলো বিক্রি করেছে কিনা আমি জানি না। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভারের এক মোবাইল ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় ৫শ’ পিস রিয়েলমি ৮ (৫ জি) মডেলের ফোন সাভারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে ১৯ হাজার ৭০০ টাকা দরে। যা হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এভাবে হয়তো আরও অনেক মোবাইল বাজারে বিক্রি করেছে মোজাম্মেল ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীর। এ বিষয়ে ইভ্যালির প্যাকেজিং সেকশনের দায়িত্বে থাকা মোজাম্মেলের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার (এইচআর এ্যান্ড এ্যাডমিন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমাদের ডেলিভারির কার্যক্রম বাইরে থেকে করার পরিকল্পনা ছিল। সেকারণে আমরা ওয়ারহাউস থেকে পণ্য বাইরে নিয়েছিলাম। গ্রাহকরা যদি জানে কোথায় পণ্য আছে সেখানে হামলা দিতে পারে সেজন্য পণ্য সরিয়ে রাখা হয়েছিল। হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিষয়টি প্রশাসনের কাউকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। মোবাইল বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, আমরা ওয়্যারহাউস থেকে যে সকল পণ্য অন্যত্র সরিয়েছিলাম সেগুলো পুনরায় ওয়্যারহাউসে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
×