ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি হলেও ‘ডাক্তারি ছাড়ব না’ ॥ প্রাণ গোপাল

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

এমপি হলেও ‘ডাক্তারি ছাড়ব না’ ॥ প্রাণ গোপাল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে নাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতির চূড়ান্তে উঠেছেন, সামলেছেন দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব, চিকিৎসা সেবার জন্য ভূষিত হয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কারে, প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক হিসেবেও নাম কুড়িয়েছেন। এমন সব খ্যাতির পালক যার মুকুটে, সেই প্রাণ গোপাল দত্ত এখন নতুন পরিচয়ে আসছেন দেশবাসীর সামনে। জনপ্রতিনিধি হয়ে বসতে যাচ্ছেন সংসদে। সাবেক ডেপুটি স্পীকার মোঃ আলী আশরাফের মৃত্যুতে শূন্য কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রাণ গোপাল বাদে আর কোন প্রার্থী না থাকায় সোমবার তাকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এখন গেজেট প্রকাশের পর শপথ নিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাত্রা শুরু হবে এই চিকিৎসকের। সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছা তার আগেই ছিল, গতবার প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তখন দলের সায় না পেলেও উপনির্বাচনে সেই সাধ পূরণ হলো তার। নতুন যাত্রার শুরুর লগ্নে বিডিনিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রাণ গোপাল দত্ত জানালেন, সংসদ সদস্য হলেও চিকিৎসকের পেশা ছাড়ছেন না তিনি। রোগী দেখে যাবেন আগের মতোই। এক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের পথকে পাথেয় ঠিক করেছেন ৬৮ বছর বয়সী প্রাণ গোপাল। তিনি বলেন, ৮০ বছর বয়সে ডাঃ বিধান রায় পহেলা জুলাই ১৯৬২ সালে মারা গেছেন। উনি ৩০ জুন ১৯৬২ পর্যন্ত সন্ধ্যার পরে ১৫টা রোগী দেখে ঘুমাতে গিয়ে তারপরে মারা যান। আমিও চাই- আমারও একটা এরকম সাডেন ডেথ হোক। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেন আমি চিকিৎসা সেবা দিতে পারি। কেন এই ইচ্ছা- উত্তরে পেশার প্রতি ভালোবাসার কথা বললেন তিনি। আমি ডাক্তারী ছাড়ব না। আমি বিশ্বাস করি, এ ডাক্তারী আমাকে এ জায়গায় এনেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ৬৮ বছর বয়সে আমি যা অর্জন করেছি, রাজনীতিতে গিয়ে সব বিসর্জন দেব না। আমার অর্জনের পরিধিটা আমি ধারণের চেষ্টা করব। এটাই হলো আমার কথা। প্রাণ গোপালকে ভোট চাইতে হয়নি দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয়। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি। ন্যাপের মনিরুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে প্রাণ গোপাল বলেন, উনি আমার ছাত্র, আমার বড় ভাইয়েরও ছাত্র। আমার বাড়ির পাশের। আমি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে এসে গ্রামের স্কুলে মাস্টারি করেছিলাম, আমার বড় ভাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। উনাদের ছাত্র ওই প্রার্থী। তিনি মনে করেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই প্রতিদ্ব›দ্বী দুজন ভোটের মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াতে তাদের ছাড় না দেয়ার প্রবণতা থেকে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন (তারা)। যখন দেখা গেল আওয়ামী লীগের কোন বিদ্রোহী দাঁড়ায়নি, তখন উইথড্র করে নিয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীও অসম্ভবভাবে আমার প্রতি কৃতজ্ঞ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর এলাকার জনসেবা, সমাজসেবা ও চিকিৎসা সেবার সময় সমন্বয় করে চলার পরিকল্পনা এখন সাজাচ্ছেন প্রাণ গোপাল।। বললেন, আগামীর সব পরিকল্পনাও আপনাদের জানাব। প্রাণ গোপালের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার চান্দিনায়। পড়াশোনার শুরু সেখানেই। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর প্রাণ গোপালের ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু বাবার ইচ্ছায় পড়তে হয় মেডিক্যালে, ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে। মেডিক্যালের ছাত্র থাকা অবস্থায় একাত্তরে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে নামেন দেশকে স্বাধীন করতে। স্বাধীনতার পর ফিরে যান আবার মেডিক্যাল কলেজে, ১৯৭৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। যোগ দেন সরকারী চাকরিতে। চার বছর পর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। ১৯৮৩ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রাণ গোপাল। সেখান থেকে নানা পদ-প্রতিকূলতা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসেন। দুই মেয়াদে এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে চিকিৎসা বিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কার পান প্রাণ গোপাল দত্ত ।
×