ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মালিকের নির্দেশেই কর্মস্থলে ছুটেছেন শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১ আগস্ট ২০২১

মালিকের নির্দেশেই কর্মস্থলে ছুটেছেন শ্রমিকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আজ থেকে খুলছে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানায় কাজে যোগ দিতে ভোগান্তি সঙ্গী করে কর্মস্থলে ফিরেছেন শ্রমিকরা। পথের দুর্ভোগ নিয়ে শনিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরমুখী পোশাক কর্মীরা বলেছেন, ‘তাদের ফোন করে জানানো হয়েছে, ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস খুলছে। তাই চাকরি বাঁচাতে পথে সীমাহীন ভোগান্তি পাড়ি দিয়ে চলে এসেছেন তারা।’ বিভিন্ন কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে রবিবার শ্রমিকদের কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। কারখানার মালিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানান। যদিও ঈদে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকদের এখনই কর্মস্থলে ফিরে না আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। কিন্তু মালিকের নির্দেশে চাকরি বাঁচাতে শনিবার বিভ্রান্ত শ্রমিকরা শহরে ছুটেছেন স্রোতের মতো। অথচ পোশাক কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা রবিবার থেকে খুললেও আপাতত কেউ কাজে যোগ না দিলে চাকরি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বাংলাদেশে রফতানি আয়ের অধিকাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই শিল্প মূলত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকেন্দ্রিক হলেও প্রায় অর্ধ কোটি শ্রমিক ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ঈদের পর যে লকডাউন শুরু হয়েছে, তাতে সব শিল্প কারখানাও ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে সরকারই জানিয়েছিল। ফলে যেসব শ্রমিক ঈদের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন লকডাউনে আর ফিরতে হচ্ছে না তাদের। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বারবার অনুরোধে শুক্রবার সরকার জানায়, রফতানিমুখী কারখানা রবিবার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত। অর্থাৎ রবিবার থেকে গার্মেন্টস খোলা। এই সিদ্ধান্ত জানার পর স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা না করে শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে পোশাক কর্মীরা খোলা ট্রাক, রিক্সা, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় করে কর্মস্থলে ফিরেছেন। পদ্মা পারে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সকাল থেকেই ভিড় ছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তিন চাকার বিভিন্ন গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে অনেককে বাংলাবাজার ঘাটে আসতে দেখা যায়। লকডাউনে লঞ্চ ও স্পিটবোট চলাচলও বন্ধ। ফলে যাত্রীরা গাদাগাদি করেই ফেরিতেই উঠছিলেন। শনিবার সকাল থেকে হাটিকুমরুল, পাঁচলিয়া, কড্ডার মোড় থেকে নানা যানবাহনে গাদাগাদি করে ঢাকার দিকে ছুটতে দেখা গেছে মানুষকে। এদিকে কারখানার মালিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানান। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শুক্রবার শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে পোস্ট দেন। তিনি বলেন, ‘এত দ্বারা এ.জে.আই গ্রুপ ও এ.বি গ্রুপে কর্মরত সকল কর্মকর্তা এবং শ্রমিক ভাই বোনদের উদ্দেশে জানানো যাইতেছে যে, আগামী ১ আগস্ট থেকে আমাদের ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণভাবে খোলা থাকবে। তাই সবাইকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো, কেউ যেন অনুপস্থিত না থাকে।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার গণমাধ্যমে বলেন, ‘বিষয়টি শনিবারই বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে। যারা ঢাকা অবস্থান করছেন, বিশেষ করে যারা ঈদে বাড়ি যায়নি এবং যারা ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ফিরে এসেছেন তাদের নিয়েই তারা (মালিকরা) কারখানা পরিচালনা করবেন। বাইরে থেকে তারা কোন কর্মীকে নিয়ে আসবে না। যারা এই পাঁচদিন কাজ করবে না, যারা বাইরে আছেন- তাদের চাকরিতে কোন সমস্যা হবে না। তারা ৫ তারিখের পর ধাপে ধাপে আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘তাদের (বিজিএমইএ নেতা) সঙ্গে যখন কারখানা খোলা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়, তখনও বলা হয়েছিল- যারা শুধু ঢাকাতে বা কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন, তারাই যোগ দেবেন। সেটার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত (কারখানা খোলা) নেয়া হয়েছে।’ ‘কেউ হয়ত মনে করছেন ৫ দিন মিস করব, চলে যাই। অনেকে হয়ত আতঙ্কিত হয়ে ফিরছেন, চাকরি থাকবে কিনা! আমরা সবাইকে বলছি- কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বিজিএমইএ সভাপতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা দেখবেন, সরকারও বিষয়টি দেখবে।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কেউ চাকরি হারাবেন না। তারা আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে ৫ তারিখের পর আসবেন। এত কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে তাদের আসার কোন প্রয়োজন নেই।’ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটি জিনিস বন্ধ হলে খুলতেও তো সময় লাগে। এখন খুলে তারা টুকিটাকি কাজগুলো করবে। আস্তে আস্তে বড় অর্ডারগুলো করবে।’ গত বছর মহামারী শুরুর পর লকডাউনে কারখানা খোলার খবরে অনেক পোশাক শ্রমিককে মাইলের পর মাইল হেঁটে ঢাকায় আসতে দেখা গিয়েছিল। পরে কারখানা না খোলায় তাদের আবার হেঁটেই ফিরতে হয়েছিল। শনিবার এক বিবৃতিতে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত কোন শ্রমিক-কর্মচারী কারখানায় কাজে যোগদান করতে না পারলে তার ওপর কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হবে না।
×