ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজভাঙ্গা শিল্প নিয়ে আইন হলেও নীতিমালা হয়নি

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৭ জুলাই ২০২১

জাহাজভাঙ্গা শিল্প নিয়ে আইন হলেও নীতিমালা হয়নি

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই দেশে নির্মাণ কাজের অন্যতম অনুষঙ্গ রডের মূল্যে উর্ধগতি। এর ফলে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা রয়েছেন বিপাকে। সরকারী-বেসরকারী সব পর্যায়ে বর্ধিতমূল্যে রডের জোগান হচ্ছে। এতে করে নির্মাণ কাজে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে লোহা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ রি-রোলিং মিলসমূহে কাঁচামালের প্রায় ৭০ শতাংশ জোগান হয় জাহাজভাঙ্গা (স্ক্র্যাপ) শিল্প থেকে। দেশজুড়ে একমাত্র চট্টগ্রামেই এ শিল্পের অবস্থান। চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ৫৫টি শিপইয়ার্ডে জাহাজভাঙ্গার কার্যক্রম চলমান। অতীতে এ সংখ্যা ছিল ১৫৭। একদিকে জাহাজভাঙ্গা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু বেড়েছে স্ক্র্যাপ শিপ আমদানি। বিএসবিআরএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এ্যান্ড রিসাইর্ক্লাস এ্যাসোসিয়েশন) সূত্রে সোমবার জানানো হয়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ শিপের মূল্য অতীতের চেয়ে টনপ্রতি প্রায় একশ থেকে দেড়শ ডলার বেশি। ফলে দেশে স্ক্র্যাপশিপ এনে ভাঙ্গার পর এর টনপ্রতি মূল্যও বেড়ে গেছে। কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লোহা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহেও ফিনিশড প্রোডাক্ট অর্থাৎ লোহার মূল্য বেড়ে গিয়ে বর্তমানে টনপ্রতি প্রায় ৭০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা গত দশ বছরে একটি রেকর্ড। এখানে উল্লেখ্য, ১৯১৯-১৯২০ অর্থবছরে দেশে ১৫৭টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়। যা থেকে কাঁচা লোহা বেরিয়ে আসে ১৯ লাখ ৬১ হাজার টন। পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ আমদানি হয় ২৩২টি। যা থেকে কাঁচামাল জোগান হয় ২৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। আমদানি বাড়ার পরও লোহার দাম বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে বিএসবিআরএ। অপরদিকে যেসব রি-রোলিং মিল জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের বিলেট ব্যবহার না করে উন্নতমানের কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে তৈরি করে সেসব রডের মূল্য সাধারণত টনপ্রতি বাংলা রডের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বেশিতে বাজারজাত হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেসব রডের মূল্য সব সময় বেশি। বর্তমানে লকডাউনের কারণে সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত শিপ ব্রেকিং বেল্টে জাহাজভাঙ্গার কাজ বন্ধ রয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। সরাসরি জড়িত রয়েছে ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক। আর পরোক্ষভাবে কাঁচামাল কেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও ১২ হাজার ছোট বড় প্রতিষ্ঠান। এরাই মূলত রি-রোলিং মিলগুলোতে রড তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। বিএসবিআরএ সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, ২০১১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এটি সুনির্দিষ্ট বিধিমালায় পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে এ শিল্পকে আইনে রূপ দেয়া হয়। কিন্তু এখনও বিধিমালা চ‚ড়ান্ত হয়নি। এ শিল্প থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। অপরদিকে এ শিল্প জোনে গ্রিড শিপইয়ার্ড গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। এটি একটি ব্যয়বহুল কাজ। এ শিল্প নিয়ে নেতিবাচক বহু তথ্যের প্রচার রয়েছে। কিন্তু এ শিল্প থেকে যে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয় মূলত তা থেকেই দেশে ৭০ শতাংশ রডের জোগান হয়। এতে করে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যের রড বাজারজাত হওয়ার সুযোগ ঘটে, যা নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া স্ক্র্যাপ শিপ আমদানির পর তা থেকে শুধু লোহা তৈরির কাঁচামাল নয়, অন্যান্য বিভিন্ন জাতের বেরিয়ে আসে। যা নিয়েও দেশে বড় ধরনের বাজার সৃষ্টি হয়ে আছে। জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিকদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, সমন্বিত নীতিমালা জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজন। অন্যথায় এ শিল্পের কার্যক্রম চলতে থাকবে যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী। এ প্রক্রিয়ায় দেশে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মালিকরা প্রায়শ নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত এ শিল্প থেকে জাতীয় কোষাগারে বছরে গড়ে প্রায় ১২শ’-১৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব জোগান হয়ে থাকে।
×