ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাকসিন তৈরির পথ

প্রকাশিত: ২০:০১, ১৯ জুলাই ২০২১

ভ্যাকসিন তৈরির পথ

বর্তমান জনকল্যাণমূলক সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই তা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপারে সক্রিয়। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের সাধারণ মানুষ যেখন করোনার ভ্যাকসিন পায়নি সেই সময়ে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটে (আইভিআই) আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিল বাংলাদেশ। এর ফলে ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর করা সহজ হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন বাংলাদেশ ওষুধ প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে সরকারী তালিকাভুক্ত ৮৫০টি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা ও ২৬৯টি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করে আসছে। কলেরা ভ্যাকসিনের অভ্যন্তরীণ বিকাশ ও বিতরণসহ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অংশীদারদের সঙ্গে ভ্যাকসিন গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন দেশের বাইরে প্রশংসা অর্জন করেছে। আইভিআইয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান জর্জ বিকারস্টাফ আইভিআই প্রতিষ্ঠা-চুক্তির প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্য প্রাপ্তিতে বাংলাদেশকে স্বাগত জানান। তিনি তার বক্তব্যে নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, উন্নয়ন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আইভিআইয়ের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইভিআইতে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী তার বক্তব্যে, বাংলাদেশ ও আইভিআইয়ের মধ্যকার সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে কলেরা, শিগেলা, এ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করেন। আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ পাওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই)। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আইভিআইয়ের সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংস্থাটি ১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাগত জানায়। স্মরণযোগ্য জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে অলাভজনক আন্ত-সরকারী সংস্থা আইভিআই প্রতিষ্ঠা হয়। এতে ৩৬টি দেশ রয়েছে যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, ভারত ও ফিনল্যান্ড রাষ্ট্রীয় অর্র্থদাতা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মধ্যস্থতাকারী। বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চলতি বছরের ২১ মার্চ চুক্তিটি অনুসমর্থন করে এবং গত ৫ এপ্রিল জাতিসংঘ চুক্তির অনুসমর্থন প্রাপ্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিটি গত ১ মে থেকে কার্যকর হয়। আইভিআইয়ের মহাপরিচালক ড. জেরোম কিম বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, বিকাশ ও বিতরণে আইভিআইয়ের কার্যক্রম ও চলমান প্রকল্প এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আইভিআইয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরে একটি বিশদ ও তথ্যমূলক উপস্থাপনা প্রদান করেন। আইভিআইয়ের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ রোগমুক্ত বিশ্ব নিশ্চিতকরণে আইভিআইয়ের কর্মসূচীকে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নততর গবেষণা, ক্লিনিক্যাল বিকাশ ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম করবে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সহায়তা করবে। আইভিআইয়ে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
×