
ছবি: প্রতীকী
সকালের শুরুটা যেমন হয়, পুরো দিনের মেজাজ অনেকটা তেমনই চলে। যারা লেখালেখি, পরিকল্পনা, নকশা তৈরি বা যেকোনো সৃজনশীল কাজে যুক্ত, তাদের জন্য সকালটা হতে পারে একদম জাদুকরী সময়। কিন্তু সেই জাদু যেন কাজ করে, তার জন্য দরকার কিছু ছোট্ট অভ্যাস। খুব বড় কিছু না, বরং পাঁচটি সাধারণ অভ্যাস বা টেকনিক ঠিকঠাক মেনে চললেই সকালের সৃজনশীলতা অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে।
প্রথমেই যেটা জরুরি, সেটা হলো ঘুম থেকে ওঠার পর অন্তত আধা ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা। আজকাল আমাদের ঘুম ভাঙে মোবাইল হাতে নিয়েই, কিন্তু এই অভ্যাসটা সৃজনশীলতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। কারণ ঘুম ভাঙার পর মস্তিষ্ক থাকে অনেকটা খালি খালি, অনেকটা সাদা ক্যানভাসের মতো। তখন আমরা যদি একদম শুরুতেই নিউজফিড, মেসেজ বা ভিডিওর ঝাঁকে ঢুকে পড়ি, তাহলে সেই ক্যানভাসে নিজের ভাবনা আঁকার সুযোগটাই আর থাকে না। বরং এই সময়টাতে কাগজে কিছু লেখা, ডায়েরি লেখা বা নিঃশব্দে চা-কফি খাওয়া মাথাকে প্রস্তুত করে নিজের ভেতরের কথা শোনার জন্য। এই অভ্যাসটা প্রথমদিকে কঠিন লাগলেও মাত্র ৭ দিন চর্চা করলেই বোঝা যাবে কতটা বড় পার্থক্য আনতে পারে।
দ্বিতীয় যে জিনিসটা কাজে আসে, সেটা হলো সকালের ছোট্ট এক্সারসাইজ বা স্ট্রেচিং। অনেকে ভাবেন সৃজনশীল কাজ মানেই চেয়ারে বসে কাজ, শরীরের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাস্তবে মাথার ভাবনা আর শরীরের গতিশীলতা অনেকটাই একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। সকালে ১০-১৫ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম, বা হালকা ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, মন সতেজ হয়, এবং চিন্তা করার গতি বাড়ে। এমনকি অনেক বিখ্যাত লেখক যেমন হ্যারুকি মুরাকামি, সকালের এক্সারসাইজকে তাদের সৃজনশীল জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছেন।
তৃতীয় টেকনিকটা একটু অবাক লাগতে পারে। সেটা হলো একেবারে সকালে কিছু ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাজ করা। যেমন ফুল গাছের যত্ন নেওয়া, রান্নাঘরে একটা নতুন চা বানিয়ে দেখা, অথবা একটা পুরনো বইয়ের পাতায় চোখ বুলানো। এগুলোর মধ্যে ‘প্রয়োজনীয়তা’ হয়তো নেই, কিন্তু এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো মাথার ওপর থেকে চাপ কমায়। আর চাপ কমলেই সৃজনশীলতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কারণ চাপের মধ্যে মাথা ‘বাঁচার চিন্তা’ করে, ‘নতুন কিছু ভাবার চিন্তা’ না। তাই নিজেকে কিছু সময় দিন এমন কাজের মধ্যে, যেখানে ভুল করার ভয় নেই, যেখানে শুধু নিজের জন্য কিছু করা যায়।
চতুর্থ অভ্যাসটা অনেকটাই মানসিক। সেটা হলো নিজের ভাবনাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া। সকালে উঠে আমরা অনেক সময় মাথায় ঘুরতে থাকা ভাবনাগুলো পাত্তা দিই না। ভাবি, পরে ভাববো, এখন জরুরি কাজ আছে। কিন্তু সকালের সেই ভাবনারা অনেক সময় সবচেয়ে তাজা ও আসল চিন্তা হয়। সেই মুহূর্তেই কাগজে বা মোবাইলের নোটসে সেগুলো লিখে রাখা গেলে, পরবর্তীতে এগুলো থেকেই তৈরি হতে পারে গল্প, লেখা, ছবি, বা যেকোনো নতুন আইডিয়া। নিজের ভাবনাকে গুরুত্ব দিলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে আরও ভাবনা দিতে শুরু করে। এটা অনেকটা ছোট বাচ্চার মতো—যত প্রশংসা পায়, তত ভালো কাজ করে।
সবশেষে যে টেকনিকটা, সেটা হলো সকালে ‘শান্তির রুটিন’ তৈরি করা। এখানে ঘড়ির কাঁটার মতো কড়া নিয়মের দরকার নেই, বরং এমন কিছু কাজ প্রতিদিন সকালে করা যা নিজের মন ভালো করে। সেটা হতে পারে পাখির ডাক শোনা, জানালার ধারে বসে থাকা, প্রিয় গান শোনা বা প্রিয় কফি বানানো। দিনের শুরুতে এমন কিছু মুহূর্ত তৈরি করলে মন অনেক বেশি খুশি থাকে। আর খুশি মনই সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল হয়।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, সৃজনশীলতা বাড়ানোর জন্য খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। দরকার একটু সচেতন হওয়া, নিজের সকালটাকে যত্ন দিয়ে সাজানো। প্রতিদিন যদি সকালে নিজের জন্য কিছু সময় রাখা যায়, তাহলে সারা দিনটাই হয়ে ওঠে আরও অর্থবহ, আরও রঙিন। এবং সেই রঙ দিয়ে গড়া যায় নতুন কিছু— হোক তা লেখা, ছবি, আইডিয়া কিংবা স্বপ্ন।
এম.কে.