ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

রাতে ভালো ঘুম না হলে সকালে কীভাবে এনার্জি ফিরিয়ে আনবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৪ জুলাই ২০২৫

রাতে ভালো ঘুম না হলে সকালে কীভাবে এনার্জি ফিরিয়ে আনবেন

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেক সময় নানা কারণেই রাতের ঘুম ঠিকমতো হয় না। কখনও চিন্তা, কখনও কাজের চাপ, কখনও বা শরীরের অসুস্থতা আমাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই মনে হয়, যেন শরীরটা কাঠ হয়ে আছে, মাথাটা ভারি লাগছে, আর কাজে মন বসছে না কিছুতেই। এমন পরিস্থিতিতে দিনটা পার করা তো দূরের কথা, দিনের শুরুটাই হয়ে ওঠে কষ্টকর। কিন্তু ভালো ঘুম না হলেও, কিছু ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে সকালে নিজের এনার্জি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চলুন জেনে নিই কীভাবে।

সবচেয়ে আগে দরকার ঘুম থেকে উঠেই শরীরকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তোলা। অনেকেই ঘুম ভাঙার পরই মোবাইলে হাত দেন। এটি এড়িয়ে চলা ভালো। তার বদলে কিছুক্ষণ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা বা ধীরে ধীরে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এরপর জানালার পর্দা সরিয়ে রোদের দিকে তাকান। প্রাকৃতিক আলো শরীরের বায়োলজিকাল ঘড়িকে সিগন্যাল দেয় যে এখন জেগে ওঠার সময়। সূর্যের আলো মন মেজাজও ভালো করে দেয়, ক্লান্তি খানিকটা কমে যায়।

এরপর চেষ্টা করুন একটু হাঁটাহাঁটি করার। সকালে একেবারে ব্যায়াম করার শক্তি না থাকলেও, ঘরের মধ্যেই কয়েক মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা স্ট্রেচিং করতে পারেন। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় বেশি, আর ধীরে ধীরে শরীরে কিছুটা ফুরফুরে ভাব আসে।

এবার পানি খাওয়ার পালা। ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর অনেকটা সময় পানি ছাড়া থাকে, তাই ডিহাইড্রেশন হতেই পারে। তাই সকালে উঠে অন্তত এক-দেড় গ্লাস পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। চাইলে হালকা কুসুম গরম পানি বা লেবু পানি খেতে পারেন। এটা শরীরকে রিফ্রেশ করে তোলে, হজমেও সাহায্য করে।

এনার্জি ফিরে পাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় হলো একটি হালকা কিন্তু পুষ্টিকর নাস্তা। অনেকেই সকালে ক্ষুধা না লাগলে নাস্তা এড়িয়ে যান। কিন্তু ঘুম না হওয়ার রাতে শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে, তাই সকালে কিছু খাওয়া খুব দরকার। কলা, ওটস, ডিম, টোস্ট, বাদাম বা দুধ— এসব সহজপাচ্য খাবার শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত মশলাদার বা ভারী খাবার এ সময় এড়িয়ে চলাই ভালো।

কিছু মানুষ কফি বা চা ছাড়া সকাল শুরু করতে পারেন না। এটি এক অর্থে স্বাভাবিক, কারণ ক্যাফেইন সাময়িকভাবে ঘুমভাব কাটাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন এটি অতিরিক্ত না হয়। এক বা দুই কাপ কফি/চা খেলে সমস্যা নেই, কিন্তু এর বেশি ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, ঝিমুনিও বাড়িয়ে দিতে পারে। চাইলে এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে দিন শুরু করতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে, যা শরীরের জন্য ভালো।

সকালের মন-মেজাজ ঠিক রাখতে মানসিক প্রশান্তির দরকার। এক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকা, ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নেওয়া বা হালকা মেডিটেশন করতে পারেন। ঘুম ভালো না হলে মনও খিটখিটে হয়ে থাকে। তাই সকালে এমন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন, যাতে মানসিকভাবে খানিকটা প্রশান্তি আসে।

সারাদিন অনেক কাজ থাকলেও, সকালটা যেন একটু ধীরে কাটানো যায় সেটি চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়া করে তৈরি হওয়া, রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে অফিসে যাওয়া— এসব চাপ শুধু এনার্জি কমিয়ে দেয়, মনকেও ক্লান্ত করে। বরং সময় নিয়ে সকাল শুরু করলে ঘুমের ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।

সবশেষে বলতেই হয়, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া আমাদের জীবনের অংশ। এটা হতেই পারে, বিশেষ করে কাজের চাপে বা মানসিক অস্থিরতায়। তবে তা নিয়ে পুরো দিনটাকে নষ্ট না করে বরং কিছু সচেতন পদক্ষেপ নিলে শরীর ও মন আবারও শক্তি ফিরে পায়। এক রাত ভালো ঘুম না হওয়া মানেই যে পরদিন আপনার কর্মক্ষমতা থাকবে না, তা কিন্তু নয়।

বরং একটু যত্ন নিয়ে, নিজের শরীর-মনকে বোঝার চেষ্টা করলে ক্লান্ত সকালও হয়ে উঠতে পারে উদ্যমী। নিয়মিত এসব অভ্যাস গড়ে তুললে, শুধু ঘুমহীন রাতই নয়, জীবনের অন্য চাপগুলো সামলাতেও অনেকটা সুবিধা হয়। কারণ, দিনটা কেমন যাবে— তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার সকালটা কেমন কাটছে তার ওপর।

এম.কে.

×