ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় নাটাবের সেমিনার

‘করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হলে পরিণাম ভয়াবহ’

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৫ জুন ২০২১

‘করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হলে পরিণাম ভয়াবহ’

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ কোভিড-১৯ পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে ফুসফুস থেকে য²া সংক্রমণের বিষয়টি সামনে এসেছে। করোনা (বর্তমানে যার নাম সার্স কোভি-২) সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে অকেজো করে দিলে পরিণাম মৃত্যু। পালমোনারি টিবি (টিউবারক্লসিস) ফুসফুসে সংক্রমিত হয়। কাশি হয়। শ^াসকষ্ট হয়। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবনে য²া ভাল হয়। করোনার বিষয়ে বলা হচ্ছে, জটিল অসুখ যেমন য²া ডায়াবেটিস হার্ট কিডনির সঙ্গে করোনা যুক্ত হলে পরিস্থিতি অবনতি হয়। শুধু করোনায় কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড অতিক্রান্তের পর শরীরে ইমিউনিটি সৃষ্টি হলে রক্ষা পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত তাই দেখা যাচ্ছে। তবে এর ব্যত্যয় আছে। প্রতিষেধক হিসেবে যে টিকার কথা বলা হচ্ছে এখনও সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়নি। কবে সম্পূর্ণ টিকা আসবে এ নিয়ে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়গুলো বগুড়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় য²া নিরোধ সমিতির (নাটাব) এক সেমিনারে উত্থাপিত হয়েছে। বলা হয় কোভিডকালে য²া নিয়ন্ত্রণের নিয়মিত কার্যক্রম কমে গেছে। নাটাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানু বলেন, বগুড়ায় টিবি ক্লিনিকে প্রতিদিন যে সংখ্যার রোগী এসে য²া (টিবি) পরীক্ষা করত গত বছর (২০২০) থেকে অনেক কমেছে। ২০১৯ সালের হিসেবে দেখা যায় ৪৮ হাজার ৯শ’৮৭ জনের পরীক্ষায় টিবি শনাক্ত হয় ৪ হাজার ৮শ’ ৮১ জনের। পরের বছর (২০২০) টিবি পরীক্ষার হার অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। শহরের টিবি রোগীর চেয়ে গ্রামের টিবি রোগী বেশি। চলতি বছর ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে টিবি পরীক্ষার জন্য এসেছেন প্রায় ৩ হাজার জন। কোভিডকালে করোনা নিয়ে যতটা আতঙ্কের সচেতনতা টিবি নিয়ে সেই সচেতনতায় ভাটা পড়েছে। এই বিষয়ে বগুড়া টিবি ক্লিনিকের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ কোন না কোন সময়ে য²ায় আক্রান্ত হচ্ছে। য²া দেহের যে কোন স্থানে আক্রমণ করতে পারে। সকল য²ার চিকিৎসা আছে। সরকার য²ার চিকিৎসা ফ্রি করে দিয়েছে। বাংলাদেশ বিশে^র য²া ঝুঁকির ৩০ দেশের মধ্যে আছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে য²া প্রতি লাখে ১০ জনে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম ২০১৬-২০৩৫ ন্যাশনাল টিউবারক্লসিস কন্ট্রোল স্ট্রাটেজি (এনটিবি)। তিনি জানান, কিছু য²ার চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে ফুসফুসের য²ার সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা কখনও বড় ধরনের ঝুঁকিতে চলে আসে। যে কারণে ১৯৯৩ সাল থেকে ডটস (ডাইরেক্ট অবজারভর্ড ট্রিটমেন্ট) চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো ওষুধ সেবনের মাঝ পর্যায়ে সেবন ছেড়ে দেয়া। রোগী মনে করে রোগ তো সেরে গেছে। এই রোগীরা পুনরায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। সেমিনারে এই কথার সূত্র ধরে বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজার রহমান তুহিন বলেন, কোভিডকালে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত যে রোগী মারা যাচ্ছে তাদের কেস স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে করোনার সঙ্গে অন্য উপসর্গ ও জটিলতা থাকছে। যেমন য²া ডায়াবেটিস হার্ট কিডনি ইত্যাদি। টিবি ও করোনা যেহেতু ফুসফুস থেকে সংক্রমিত সে কারণে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্টসহ অন্য চিকিৎসা দেয়ার পর সেই রোগী মারা গেলে বলা হচ্ছে করোনায় মৃত্যু। এই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন যারা ফুসফুসের য²ায় আক্রান্ত তাদের পরীক্ষা করে দ্রæত চিকিৎসা দরকার। তুহিন বলেন, সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয় ঢেউ শুরু হলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে এ নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবতে হচ্ছে। যারা য²া হার্ট কিডনি ডায়াবেটিসসহ বড় ধরনের জটিল রোগে ভুগছেন তাদের সর্বাত্মক সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বিশেষ করে যারা ফুসফুসের টিবিতে আক্রান্ত তাদের কালবিলম্ব না করে ওষুধ সেবন শুরু করা দরকার। এদিকে বগুড়ায় টিবি ক্লিনিকে পরীক্ষা কার্যক্রম থিতিয়ে পড়েছে। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নেই। কয়েক বছর ধরে ম্যানুয়াল এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে আছে। সারাবার উদ্যোগ নেই। রোগীর রক্ত পরীক্ষার পর এক্সরে করার জন্য পাঠানো হয় শহরের ভিতরে মফিজ পাগলার মোড়ের এক ক্লিনিকে। বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামির হোসেন মিশু জানান, বগুড়ায় টিবি ক্লিনিক ও টিবি হাসপাতাল একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। কোভিডকালে দুই প্রান্তে থাকা টিবি সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন। তাওপর যক্ষèা ও করোনা যখন আক্রমন করে ফুসফুসে। এই অবস্থায় যক্ষèা হাসপাতাল ও টিবি ক্লিনিকের সেবার মান গতিশীল করা দরকার।
×