ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিএমপি’র দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৩ জুন ২০২১

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিএমপি’র দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সূত্রাপুর থানা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলাম। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোঃ আঃ আহাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সুত্রাপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর ভুক্তভোগী নাজমুল হক সুমন পল্টন থানায় ওই দুজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। গত ২০ জুন পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল সূত্রাপুর থানায় গিয়ে রহমাত উল্লাহ ও রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডিসি মোঃ আহাদ জানান, অন্যায়কারী পুলিশ হোক আর যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। তাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পল্টন থানা পুলিশ জানায়, একজন মাদক কারবারিকে আটকের কথা বলে সূত্রাপুরের দুজন পুলিশ শান্তিনগরে আসেন। কিন্তু তারা তাকে না ধরে সামারি করে চলে যান। তবে মামলায় মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় প্রথমে দুজন সাধারণ ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। পরে তাদেরকে গ্রেফতার করা হলে দুজন পুলিশ সদস্যের নাম জানান তারা। এরপরই রহমাত উল্লাহ ও রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফরহাদ হোসেন ও হাসিব হাসান শোভন নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ভুক্তভোগী নাজমুল হকের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তার বাসা শান্তিনগরের ইস্টার্ন পিস ভবনে। সেখানে গত ১৪ জুন রাত ৯টার দিকে সাদা পোশাকে দুজন তাদের বাসার দরজায় নক করেন। ভেতর থেকে সুমনের বাবা দরজা খুলে দিলে নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করেন তারা। তারা সুমনের রুমে যান। এরপর রুমের আলমারি, ওয়্যারড্রোব, বিছানা ওলট-পালট করেন। তাদের মধ্যে একজন পকেট থেকে ইয়াবার মতো দেখতে কিছু ট্যাবলেট সুমনের রুমের টেবিলের ওপরে রাখেন। আর সুমন ইয়াবার ব্যবসা করেন বলে হুমকি-ধামকি দেন। ‘বাঁচতে চাইলে’ তাদেরকে টাকা দিতে হবে বলে জানান তারা। সুমন উপায় না দেখে তার কাছে থাকা ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন। এ সময় ডিবি পরিচয় দেয়া একজন সুমনের মোবাইল ফোন হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তার পরিচিত ফরহাদকে বাসায় আসতে বলেন। ফরহাদ রাত ১১টার দিকে সুমনের বাসায় যান। বাসায় যাওয়ার পর ডিবি পুলিশের একজন ফরহাদের হাতে হাতকড়া পরান। এ সময় তারা বলেন, ফরহাদকে ছাড়াতে হলে তার মোটরসাইকেলটি দিয়ে দিতে হবে। পরে ১ লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে হবে। পরিচিত বিবেচনায় টাকা দেয়ার শর্তে তারা ফরহাদকে ছেড়ে দেন। যাওয়ার সময় কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন না করার জন্য সতর্ক করেন। ফরহাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান তারা। ফরহাদ ও শোভন গত ১৬ জুন বেলা ১১টায় সুমনের বাসায় আসেন। শোভন মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে আনার জন্য সুমনকে চাপ দেন। ফরহাদ এ সময় ডিবি পরিচয় দেয়া দুজনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং সুমনের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিলে তারা সুমনকে জানান, ১ লাখ টাকা পেলে তারা মোটরসাইকেল দিয়ে দেবেন। তখনও তারা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেন। পরে সুমন বুঝতে পারেন, ফরহাদ, শোভন ও ডিবি পরিচয় দেয়া দুজন যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। এ ব্যাপারে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। এ বিষয়ে পল্টন থানা বিস্তারিত বলতে পারবে।
×