ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাহকদের উপর ব্যাংকগুলো বিভিন্ন চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ১৫ জুন ২০২১

গ্রাহকদের উপর ব্যাংকগুলো বিভিন্ন চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের উপর ব্যাংকগুলো কোন কোন খাতে চার্জ, ফি এবং কমিশন নিতে পারবে তার পরিমাণ ও হার নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন এই ফি এবং চার্জের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। শিগগিরই নতুন এই ফি এর শর্ত সব ব্যাংকের উপর কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ও অন্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনা, ঋণের ফি, বিভিন্ন ধরণের সার্টিফিকেট নেয়া, স্থানীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স-সহ নানা ক্ষেত্রে কি ধরণের ফি হতে পারে তা গ্রাহকরা জানতে পারবেন। প্রতিটি ব্যাংকে গ্রাহকদের চোখে পড়ে এমন অবস্থানে এই ফি নির্ধারণের সার্কুলারটি রাখার নিয়ম রয়েছে। গ্রাহকরা সেখান থেকেই এসব তথ্য জানতে পারবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নিয়েই এই হার নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত হিসেব পরিচালনার ফি : প্রজ্ঞাপন অনুসারে ব্যক্তিগত এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবের ক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে ফি আদায় করা যাবে সেগুলো হচ্ছে: ১. গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলার জন্য ৫০০ টাকা এবং চলতি হিসাবের জন্য ১০০০ টাকা জমা করতে হবে। তবে বিশেষ হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এই শর্ত কার্যকর হবে না। ২. সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে কোন রক্ষণাবেক্ষণ ফি লাগবে না। তবে এর বেশি হলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ১০০ টাকা, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ২০০ টাকা, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২৫০ টাকা এবং এর চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করতে পারবে ব্যাংকগুলো। চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেয়া যাবে। তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবের ক্ষেত্রে এই ফি নেয়া যাবে না। ৩. ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় হিসাব স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একই শহরে ৫০ টাকা এবং অন্য জেলায় ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে। ৪. সঞ্চয়ী হিসাব সক্রিয় করতে কোন ধরণের ফি আদায় করা যাবে না। ৫. বিভিন্ন মাসিক সঞ্চয়ী হিসাব ডিপিএস ও এফডিআর বা অন্য কোন মেয়াদী আমানত মেয়াদ পূর্তির পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে কোন নগদায়ন ফি আরোপ করা যাবে না। ৬. হিসাব বন্ধ করার ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী হিসাবে ২০০, চলতি হিসাবে ৩০০ এবং এসএনডি হিসাব বন্ধ করতে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ফি নির্ধারিত হবে। ৭. চেক বই ইস্যু করতে খরচের ভিত্তিতে ফি নির্ধারিত হবে। ৮. বিভিন্ন ধরণের চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে ন্যূনতম ব্যালেন্স ফি, ইনসিডেন্টাল চার্জ, লেজার ফি, সার্ভিস চার্জ, কাউন্টার ট্রানজেকশন ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না। ৯. বছরে দুবার হিসাবের স্থিতি নিশ্চিতকরণ সনদ বা ব্যালেন্স কনফার্মেশন সার্টিফিকেট নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ফি দিতে হবে না। দুবারের বেশি নিতে চাইলে প্রতিবার ১০০ টাকা করে দিতে হবে। ১০. সচ্ছলতা সনদ বা সলভেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবার ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। ১১. চেক ফেরতের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ফি দিতে হবে। ১২. বিও অ্যাকাউন্টের জন্য বিও সনদ পেতে ১০০ টাকা দিতে হবে। ১৩. পেমেন্ট অর্ডার স্থগিত করলে প্রতিবার অনুরোধে ৫০ টাকা দিতে হবে। ঋণ নেবার খরচ: এছাড়া ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও কোন কোন ক্ষেত্রে ফি আদায় করা যাবে এবং তাদের সর্বোচ্চ পরিমাণ কত হবে সে বিষয়েও পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এই সার্কুলারে। এর মধ্যে রয়েছে- ১. ঋণ প্রসেসিং ফি হিসেবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মঞ্জুরি হওয়া ঋণের ০.৫০% আদায় করতে পারবে ব্যাংক। তবে এর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হবে। ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে ০.৩০% ফি আদায় করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার বেশি ফি নির্ধারণ করা যাবে না। ২. ঋণ আবেদন ফি নামে কোন ফি আদায় করা যাবে না। ৩. কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ এবং কৃষি খাতে ঋণ প্রসেসিং বা পুনর্গঠন কোন ফি আদায় করা যাবে না। এছাড়া অন্য ঋণের ক্ষেত্রে পুনর্গঠন ফি ০.২৪% আদায় করা যাবে। তবে এই পরিমাণ কখনোই ১০ হাজার টাকার বেশি হবে না। ৪. যে কোন ধরণের ঋণের ক্ষেত্রে সুদ বা মুনাফার হারের অতিরিক্ত কোন সার্ভিস চার্জ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ফি, মনিটরিং বা সুপারভিশন চার্জ, ঝুঁকি প্রিমিয়াম বা যে কোন নামে অতিরিক্ত কোন চার্জ, ফি, কমিশন আদায় করা যাবে না। ৫. নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের সর্বোচ্চ ০.৫০% আর্লি সেটেলমেন্ট ফি হিসেবে আদায় করা যাবে। তবে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে ঋণ, চলতি ঋণ বা ডিমান্ড লোনের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না। এসব ক্ষেত্র ছাড়াও স্থানীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য এবং রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে নির্ধারিত খাত সমূহে কত ফি দিতে হবে সে বিষয়গুলোও নির্দিষ্ট করা হয়েছে এই সার্কুলারে। যে কারণে এই নির্দেশনা: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রাহকদের সুরক্ষা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই প্রজ্ঞাপনটি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে কারো একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হয়তো কোন লেনদেনই হয় না, তারপরও বিভিন্ন ধরণের চার্জ কেটে নেয় ব্যাংকগুলো। এগুলো বন্ধ করতেই ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফখরুল আবেদীন মিলন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ গ্রাহক বান্ধবই হবে। তিনি বলেন, ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা আলাদা চার্ট থাকে। একেক ব্যাংক একেকভাবে ফি নির্ধারণ করে থাকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের জন্য একটি মাত্র সাধারণ চার্ট নির্ধারণ করার কারণে এখন সব ব্যাংকের ফি একই হবে। যার ফলে গ্রাহকরা সুবিধা পাবেন। এই পদক্ষেপের কারণে ব্যাংক কোন গ্রাহকের কাছ থেকে কোন ধরণের গোপন কোন চার্জ কাটতে পারবে না বলে জানান মি. আবেদীন। তিনি বলেন, "এর ফলে ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে।" তার মতে, গ্রাহকদের যে কোন ব্যাংকে হিসাব খোলার আগে ফি এবং চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপরই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। এ বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, ব্যাংকে হিসাব খুলতে গেলে ফি এবং চার্জ সম্পর্কে জেনে নেয়াটা গ্রাহকদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এছাড়া হিসাব খোলার পর কোন কোন খাতে ব্যাংক গ্রাহকদের চার্জ কাটছে সে বিষয়েও ধারণা নিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে অটোমেশন চলে আসার কারণে এখন ব্যাংকের বিভিন্ন ধরণের অ্যাপস ব্যবহার করলে যেকোন ধরণের লেনদেন বা চার্জ কাটা হলে সে বিষয়ে মুহূর্তেই জানতে পারেন গ্রাহকরা। নির্ধারিত খাতের বাইরে যদি কোন ব্যাংক কোন চার্জ কাটে তাহলে সে বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্ধারিত বিভাগে অভিযোগ জানানো যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল রয়েছে যারা এই নিদের্শনার ব্যত্যয় ঘটলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান মি. ইসলাম। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×