ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরে সর্বনিম্ন

বেড়েছে চাল, তেল ও পেঁয়াজের দাম

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১১ জুন ২০২১

বেড়েছে চাল, তেল ও পেঁয়াজের দাম

এম শাহজাহান ॥ প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ থাকলেও বেড়ে গেছে চাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও চিনির মতো পণ্যের দাম। মুরগি, ডিম এবং মাছের বাজারও গরম। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে মসলাপাতির দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজেটে নতুন করে কোন করারোপ করা হয়নি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বরং বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ককর নির্ধারণ করা হয়নি। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের দাম কমার আশা করছিলেন ভোক্তা। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের বাজারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে গিয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে নিত্যপণ্য। কিছুটা স্বল্পমূল্যে ভোগ্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির ট্রাকের সামনে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য কমাতে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হতে পারে। এছাড়া মসলাপাতির দামও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির তথ্যমতে, গত ৩ জুন বাজেট ঘোষণার পর বেড়ে গেছে চাল, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম। এছাড়া হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গত সপ্তাহ থেকে একটু কমেছে পেঁয়াজের দাম। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৫ টাকায়। এছাড়া মাঝারিমানের পাইজাম ও লতা চাল ৫০-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম বাড়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা, মানভেদে সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল ৬৭০-৭৩০, চিনি ৭০-৭৫, মসুর ডাল ৭৫-১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের ডিম ও মুরগি। স্বস্তি নেই মাছের বাজারে। গতবছর ইলিশ মাছের দাম কম থাকলেও এবার ইলিশের গায়ে হাত রাখতে পারছে না মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষ। এককেজি সাইজের প্রতিটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এই দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সপ্তায় দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত একটি বৈঠক করা হবে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে টিসিবি ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর কৌশল রয়েছে। এ কারণে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়ার কোন সুযোগ নেই। জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং আরও কতিপয় শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষি আমাদের অগ্রাধিকার খাত। কৃষি খাতের প্রধান উপকরণ বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখা, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্যের ওপর বিদ্যমান ০ শতাংশ শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখা এবং অন্যান্য নিত্যসামগ্রী আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক করহার স্থিতাবস্থায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণ আমদানিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্কহ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন সুসংহত করতে সুরক্ষা প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান সুবিধা সম্প্রসারণ, দেশীয় মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং গবাদিপশু খামারিদের প্রতিরক্ষণে প্রক্রিয়াজতকৃত মাংস আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধি ও ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প রক্ষার্থে পোল্ট্রি, ডেইরি ও মাংস খাদ্য তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কতিপয় উপকরণ- কাঁচামাল এবং ওষুধসমূহ বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে বাজারে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম কমে আসবে বলে বাজেটে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে রাজধানীসহ সারাদেশে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির চিনি, মসুর ডাল এবং ভোজ্যতেল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। টিসিবির ট্রাক আসার আগেই পণ্য কিনতে ভোক্তারা ভিড় করছেন। নিত্যপণ্যের বাজারে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে প্রস্তাবিত বাজেটে দ্রব্যমূল্য কমানোর কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। কৌশলটি হলো-করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে খাদ্যপণ্য চাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি ও চিনির দাম। এলক্ষ্যে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, কৃষিতে ব্যাপক ভর্তুকি এবং আমদানি শুল্ক প্রত্যহারের ফলে আগামী বছর দেশে-বিদেশে খাদ্য উৎপাদন ভাল হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কম থাকবে। এর সুফল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এসে পড়বে। মানুষ ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান পণ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন। স্বস্তি ফিরবে বাজারে। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ ভোক্তা।
×