না- হোক অবশেষ
না ছিল বসত, মানুষের
না আমানুষের না প্রাণির;
না চোখের জলে অভিষেক
না চিতায় পোড়ামাংস ঘ্রাণ;
সুনসান লোক লোকান্তর
ভুতুড়ে বিরান অলৌকিক;
পড়িনড়ি দহন লু- হাওয়া
প্রাগাতিহাসিক কথাকার;
দগ্ধকাঠ ভাঙাঝামা ছাই
অভিশপ্ত ডাক- ডাকিনীর
উন্মাতাল অট্টহাস সাক্ষী
হয়তো কারা বেঁধেছিল ডেরা
লাগালাগি গর্ত খুঁড়েছেও
ঘূর্ণিপাকে টিকা মাপে কাল;
দূর কতদূর কাছে সুর
প্রার্থণার ভালোবাসা জাগে
চিরবিড় গেয়েছিল কেউ
দূর্বা বুকে ঢাকে খরবালু;
উপকাহিনির উপকথা নয়
নাক্ষত্রিক অন্ধচক্ষু, জ্বলে।
** নয় আবির্ভাব, নয় তিরোধান
তোমার দুয়ার, ভেবে নিই;
জেনেছি কি, সে কার বসত,
পথ, পথে বেপথ থাকেই,
বিভ্রম বিভ্রাট, চলাচলে
কামনা আকাক্সক্ষা, বায়বীয়,
বেশরম কটাক্ষ, লাজুক;
সোহাগ দংশন, পুষ্পপাপড়ি
লখিন্দর, হিম ভীমরতি
অকালের, ময়ূর- ময়ূরি
কামকেলি, নিয়তিশরণ;
দুয়ার ছিল বা, অবারিত;
যত কাছে যাই, পিছে হাঁটি,
পারাপার, কে কবে পেরলো,
দুস্তর নিঃসীম, বেহুলার;
মরি মরি, গাঙুরের ঢেউ
সাগরে উধাও; সন্ধ্যা না কি
উজ্জয়নী পথ, মনচিতে
করে -বা বিলীন; ঘণ্টা বাজে
শমন, সময়, কালান্তক
নিস্তব্ধতা, হা-মুখ গহ্বর;
দুর্জ্ঞেয় রহস্য, হে অপার
ধাঁধা, অগ্নিপক্সক্ষী, না মানব;
সে ছিল না মৃত্যু, জন্ম নয়,
হষ, মরণের জন্মান্তর,
পরম আকুতি, বিনিময়ে
তোমার বিধান, প্রিয়েপ্রিয়
ধূপধুনো আগরবাতির
ঘ্রাণ, বৃষ্টি, পাপিয়ার পিউ কাঁহা
পথ ছিল, দ্বার প্রবেশের;
অবান্তর, জিজ্ঞাসা,আদউ!
** কবিতা নয়, ভাই
মানুষের সংজ্ঞা, ভুলে গেছি
দেখা- সাক্ষাৎ-বা নেই
বহুকাল, চেনাজানা, তাও
এই-তো সে-দিন, মনে হয়
কত-যুগ, মেলাখেলাগান
শেষে, বাড়িপথে, কিছুদূর
কাত ক’টা, দিঘিপুকুরের
কোণা বেয়ে, ঢোলকলমিপাতা
মোড়া, ঘাট- আগলে, সেই মেয়ে
দেহ থেকে জল ঝরঝর
বিষবাষ্পপোড়া গন্ধ; তির
দৃষ্টি ফাটে ছি-ছিৎকারে ছি ছি
কী বা বলি কী বলি না বলে
মাটি কী সহায়, হায় হায়
হঠাৎ পকুর দিঘি জল
ফেটে পড়ে আকাশ-ভুবন
সেই থেকে শুকতারা, আলো
কোনোদিন নক্ষত্র, জ্বলে নি;
জেনেও না-জানি, তুমি-আমি!
** নিরুদ্বেগ খোঁজ
অবলুপ্ত দুটিমাত্র চোখ,
গ্রহে -বা ঠিকানা, হতে পারে;
বাড়িঘর ছেড়ে, কিছুদূর,
চৌমাথা পেরিয়ে, মেলা, মাধি
বা পৌষের, কার্তিকের, হয়তো
গ্রীষ্মবর্ষা হেমন্তের, চাঁদ
ভাঙা পূর্ণিমার অমাবস্যা
চাঁদমারি, হই হট্টরোল
আগুনের রিং চক্রকার
ঊর্ধ্বমুখী মুখ উগরে, ধুম
জ্বলন্ত বাষ্পীয় মোহোৎসব,
ধুপধাপ, ধড় ছাড়ে দেহ;
হে রফিক, খুঁড়েছো সাধের
ঝলমলে অন্ধকূপ, ঢোকো
ধাঁধার উত্তর, হয় ধাঁধা,
প্রশ্নবৎ, কূলের কিনারা,
কাছে কতদূর, পিছুটান,
হিমাঙ্ক শাসিত, মৃদু স্পর্শ
খোলস উতরায়, চন্দ্রবোড়া;
মহাগর্ভাশয়ে, শুক্রকীট!
** অতঃপর, পর
নেই, নেই তুমি নেই আমি
আকাশ- ধরণি নেই নেই
আসমুদ্র-হিমাচল নেই
অন্ধকার-আলো অন্ধকার
নেই নেই নিস্তব্ধতা নেই
অন্তহীন নিরন্তর, নেই
কে গায় কী গায় কেন গায়
শুনি কি কে শোনেবেজে চলে
বেদম হরদম বিসম্বাদি
তালবেতালের খোদাহরি
শুকতারা ভনে সান্ধ্যলয়
কী বা এসে যায়, কি না যায়
বিব্রত তখনও মায়াজাল
তোমাতে- আমাতে নেই নেই
নেই নেই আমাতে- তুমিও
নেই তাই তবু ভালোবাসা
মহাশূন্য অথই প্লাবন
সূর্যমুখী প্রলয় , প্রভাতি।
** ঘুমকথা
সে এসেছিল, না কি আসে নি,
ভাবি, জীবন যে একটাই ;
সাড়া দিয়েছিল, না কি দে নি ,
মৃত্যু, একবারই দেখা দেয়;
তারপর অতঃপর, আ মি,
সন্তরিপণে, গোরের শিয়রে
গেড়ে রাখা, প্রস্তরখণ্ডটি
সরিয়ে, পা-ফেলি, কোনদিকে;
জীবন-বা কাহিনি- বা, কিংবা
জীবনকাহিনি, তথাস্তু বা;
মঞ্চে, পর্দা টেনে দাও, তবু,
অন্তরালে, মেলে কি হিসাব;
ফল্গুধারা, অনন্ত কালের,
জন্মমৃত্যু, বিরাগ্যবিচ্ছেদ;
স্মৃতি বা বিস্মৃতি, একই ধাম,
সৃষ্টি ও প্রলয়, তারই নাম;
সান্ধ্যআসরর, কার চোখে
কবিয়াল, বাঁধো দুটি পদ;
নাইয়া, কোন কূলে দেবে ঘাট,
উড়ো কেশ, বাতাস অপার!
** চলি অন্তরীক্ষে
না, আর ভুলেও একটি শব্দ নয় ,
যতদিন না তোমার হাড়মাংসত্বকে
পাপড়ি খোলে, নীলকমলের ধড় ;
হৃৎপিণ্ড হৃদয় তন্ত্রি ফেঁড়ে
মাড়সাগরের নোনা বালিয়াড়ি,
মস্তক না ঠোকে, মাটিমানুষের গেরস্থালি;
না, পঙক্তি বা দূরে থাক, কথা
বিনিময়, নীলখামে বৃষ্টিভেজা পাপড়ি,
যদি না আকাশি তেপান্তরে কাল ছুঁয়ে
প্লাবনে প্লাবিত শাওনিপূর্ণিমায়
চাঁদে শুঁকি, ধানধনিচার হুহু ঘ্রাণ
বাতাসি হাসির রূপশালি, অকুলান
অশ্বক্ষুরে লাভাস্রোত, ডুবি ভাসি ডুবি
নিস্তরঙ্গ নিস্তব্ধতা, দূর চরাাচর, ধূপ
কুয়াশায়, কুহকিনী ডাকে, আয় আয়
জীয়নের বাসনা, তিমিরে দীপ্যমান
আলোর নিনাদ, সংহারণ, বলি
ফসিলনিদ্রায়, অন্তর্ধানে; আমি কি আমাতে!
** প্রার্থনা, ভালোবাসা
মান্দার গজারি জাম গাব
জামরুল; আমাকে জন্ম দাও;
ধানচারা ধনচার খেত
শ্রাবণে আষাঢ়ি, পুববায়ু,
শৈশব-কৈশোর পারাপার
ডুবু ডুবু , বিমুক্তি অপার;
পূর্ণিমার ঘোর থইঅথই
বানভাসি, চুম্বনের স্বাদ;
কবে যে হেমন্ত কুটিরের
দাওয়া ভোঙে, রেখে গেছে ক্ষত;
প্লাবনে প্লাবিত অবসান
বেলা, ডাক পাড়ে পরিত্রাহি;
গাঁয়ে ঢাকা সাঁঝবেলা কুপি
পৌষ মাঘে, না শুনি কোকিল;
কী বা বলে যায়, কুহু-কেকা
নৃত্যলয়মত্ত, পাখওয়াজে;
পদ্মা মেঘনা বংশি কীর্তনিয়া
ভাটিতে, না-তোলো খাটিয়ায়;
গান বুঁদ বালু-পাথরের
অমারজনীর, হই ভোর;
জারুল ফুলের মৃদু ঘ্রাণ
মেলি পাখা, বিষবাষ্প ফুঁড়ে;
রূপবিশ্ব প্রকল্পে, অরূপ
বর্জ্য, ন্যূনতম অঙ্গীকার;
ছেঁড়াঘাস লতায় জড়ানো
ভোর ফেলে গেছে, মাঠজুড়ে,
মাটি, কেঁচকেন্ন, অবহেলে
ধন্য করে নিও তুমি, প্রিয়ে!
** চক্ষু দুটি
নক্ষত্রের জলে পুড়ে গেলে,
পাতার ওপর, লেপি মাটি;
ভস্মরাশি, গড়ায় ধুলিতে,
ভুলি, তবু আশীর্বাদ হোক;
বৃষ্টি ধৌত, আগ্নেয় শিলায়,
মুক্ত হয়, অন্তর শরীর :
পিপাসার্ত, বাষ্পীয় আকাশ,
মেঘ ভাঙে, প্রভাতি ব্রীড়ায়;
কাল অন্ধ, তোমার দু’চোখে,
খুঁজেছে আশ্রয় পথবাসী
কান্তারের, আন্ধারগহ্বরে,
প্রতারিত বুকে, সেঁকে দিন!