ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

অসাবধানতায় কিডনি নষ্ট— আগেই চিনে নিন উপসর্গগুলো

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩২, ৬ জুলাই ২০২৫

অসাবধানতায় কিডনি নষ্ট— আগেই চিনে নিন উপসর্গগুলো

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি মানুষের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন, বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লবণ-পানির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং লাল রক্তকণিকার উৎপাদনে সহায়তাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ের কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলো এতটাই নিঃশব্দ ও অপ্রত্যক্ষ যে বেশিরভাগ মানুষ তা বুঝতেই পারে না। ফলে বহুক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease - CKD) অনেক দেরিতে শনাক্ত হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত সময়মতো চিহ্নিত করা গেলে এই রোগের অগ্রগতি থামিয়ে রাখা সম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, নিচের পাঁচটি উপসর্গ দেখা দিলে তা হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—

১. বারবার ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
কিডনি কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে গিয়ে শরীরে ধকল সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কিডনি যদি যথেষ্ট ইরিথ্রোপয়েটিন হরমোন তৈরি না করে, তাহলে রক্তাল্পতা হয়, যার ফলে দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, এমনকি হালকা কাজেই শ্বাসকষ্ট। অনেকেই একে সাধারণ বার্ধক্যজনিত ক্লান্তি মনে করে ভুল করেন।

২. প্রস্রাবে পরিবর্তন:
প্রস্রাবের পরিমাণ, রং, গন্ধ বা গঠনে পরিবর্তন কিডনি সমস্যার প্রথম দিকের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলায় অতিরিক্ত প্রস্রাব (নকচুরিয়া), ফেনাযুক্ত প্রস্রাব (যা প্রোটিন নিঃসরণের লক্ষণ), রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব বা অতিরিক্ত গাঢ় প্রস্রাব দেখা দিলে সতর্ক হওয়া উচিত। এসব উপসর্গকে তুচ্ছ ভেবে বসে থাকলে কিডনি চুপচাপ নষ্ট হতে পারে।

৩. পা, গোড়ালি ও মুখমণ্ডলে ফোলা:
কিডনি যখন শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরে পানি জমে গিয়ে ফোলা সৃষ্টি হয়, যা চোখে, পায়ে বা গোড়ালিতে স্পষ্ট দেখা দেয়। অনেকেই এটিকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফল মনে করে থাকেন, অথচ এটি কিডনি ব্যর্থতার স্পষ্ট লক্ষণ হতে পারে।

৪. চুলকানি ও ত্বকের সমস্যা:
রক্তে বর্জ্য পদার্থ ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্যহীনতার কারণে ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি বা শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। যদি ত্বকে কোনো দৃশ্যমান রোগ না থাকে, তবু চুলকানি লেগেই থাকে—তবে কিডনি পরীক্ষা জরুরি।

৫. ক্ষুধামান্দ্য, মুখে ধাতব স্বাদ বা বমিভাব:
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে ইউরেমিক টক্সিন জমে যায়, যার কারণে মুখে ধাতব স্বাদ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, খাবারে অনীহা বা বমিভাব দেখা দিতে পারে। অনেকে একে হজমের সমস্যা মনে করে ভুল করেন, ফলে সঠিক রোগ নির্ণয় হয় না।

চিকিৎসকের পরামর্শ কবে নেবেন?
যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক দেখা দেয় এবং ব্যক্তি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস কিংবা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের ইতিহাসে আক্রান্ত হন, তাহলে দেরি না করে কিডনি ফাংশনের রক্ত (ক্রিয়েটিনিন, eGFR) এবং প্রস্রাব (অ্যালবুমিন) পরীক্ষার মাধ্যমে অবস্থা যাচাই করা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচেতনতা এবং সময়মতো পদক্ষেপই কিডনি সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি। তাই শরীরের ক্ষীণ সতর্কবার্তাগুলোকেও অবহেলা করা যাবে না—কারণ কিডনি হয়তো তখনই নিঃশব্দে সাহায্যের আহ্বান জানাচ্ছে।

Mily

×