ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহজে ভ‚মিসেবা

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১০ জুন ২০২১

সহজে ভ‚মিসেবা

৬ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ভ‚মিসেবা সপ্তাহ পালন উপলক্ষে ভ‚মি অফিসের ডিজিটাইজেশন শীর্ষক সংবাদটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্ছক বলা যায়। কেননা, ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে যার ছোট হলেও এক খÐ জমি আছে তিনিই বিলক্ষণ জানেন যে, এর রক্ষণাবেক্ষণসহ অধিকার বজায় রাখতে প্রতিবছর প্রতিনিয়ত কি দুঃসহ ভোগান্তিতে নিপতিত হতে হয়। এই খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের বেড়াজালও প্রভ‚ত, বলা যায় পদে পদে। দেশে ভ‚মি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দামার সংখ্যাও অগণন, যা দেওয়ানি আদালতগুলোতে মীমাংসার অপেক্ষায় ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে। আশার কথা এই যে, এবার সম্ভবত এ সবের অবসান হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা, ভ‚মি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খাস বা পরিত্যক্ত, পুকুর-হাট-বাজার ইজারা, ওয়ারিসান জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধক, বর্গাÑকোন কিছুতেই আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এক কথায় ‘জমি যার রেকর্ড তার’ বিষয়টি নিশ্চিত হবে। সমগ্র দেশের ভ‚মি ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ডিজিটাইজড করা হলে সবকিছু সম্পন্ন করা যাবে ঘরে বসেই। ভ‚মির মালিককে যেতে হবে না ভ‚মি অফিসে। এতে একদিকে যেমন ভ‚মিসেবা সহজীকরণ হবে, অন্যদিকে কমবে হয়রানিসহ ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, দেশে জমির পরিমাপ অদ্যাবধি চালু রয়েছে পুরনো দলিল-দস্তাবেজে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে এর মাপও ভিন্ন ভিন্ন। ফলে হিসাবের গরমিল থাকা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এতে স্বভাবতই জট ও জটিলতার সৃষ্টি হয় জমি বেচাকেনা, মামলা-মোকদ্দমায়। এর নিরসনে অতঃপর বদলে যাচ্ছে জমির মাপ-পরিমাপ, পুরনো হিসাব-নিকাশ। এখন থেকে দেশের সর্বত্র জমির পরিমাপ হবে ইংরেজী ডেসিমেল বা শতাংশ হিসেবে। এক ডেসিমেল মানে এক শতাংশ। তবে কাঠা বিঘা একর থাকবে। মোট হিসাব করা হবে ডেসিমেল হিসেবে। এলাকা ও পাড়ার নামও ভিন্ন ভিন্ন থাকবে না। প্রামাণ্য হিসেবে যেটা সমধিক প্রচলিত, সেটিই গৃহীত ও অনূসৃত হবে দেশের সর্বত্র। এসবই নিয়ে আসা হবে জিও কোডের অধীনে। এর পাশাপাশি আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে সেই সুদূর ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ভূমি সংক্রান্ত আইন ও বিধি। নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি পুরনো আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আরও গতিশীল ভ‚মিসেবা প্রদানই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, দেশে ভূমিসংক্রান্ত আইন, বিধি, জটিলতা, বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা প্রদানে নানা সমস্যা-সঙ্কট তদুপরি দেওয়ানি মামলার পাহাড় ও দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। এর পাশাপাশি উৎকোচ প্রদান, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তো আছেই। এসব অবসানের লক্ষ্যেই ভূমি আইন আধুনিক ও সময়োপযোগী করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি জমা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ রকম একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তা মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। অনলাইনে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে জমির খাজনা, নামজারিসহ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করা গেলে এসব কাজ অত্যন্ত সহজে হয়রানি ব্যতিরেকে করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কমবে অযথা হয়রানি, সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতি।
×