ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুবিধা পাবে ১০ হাজার পরিবার

সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ যাচ্ছে বরিশালের দুর্গম চরাঞ্চলে

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৩ মে ২০২১

সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ যাচ্ছে বরিশালের দুর্গম চরাঞ্চলে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে নদীবেষ্টিত ও নদীতে খন্ডিত বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দুর্গম জাঙ্গালিয়া, চরগোপালপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এতোদিন এ তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সূত্র মতে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে মাসকাটা নদীর তলদেশ হয়ে ওই তিন ইউনিয়নের দক্ষিণ তীরে ১৭ শত মিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন কাজের গত ২ মে উদ্বোধণ করা হয়েছে। আর এ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন শেষে বিদ্যুতায়নের মধ্যদিয়ে ওইসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলা সদরের সাথে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় ওই উপজেলার মানুষ আধুনিক উন্নয়ন থেকে অনেকটা বঞ্চিত। বিশেষ করে এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষকে নদী ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ওই উপজেলার দুর্গম তিনটি ইউনিয়নের মানুষ সাবমেরিন ক্যাবলের সহায়তায় বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। মাসকাটা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথ বলেন-উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন, তা করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সারা বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাসকাটা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন শেষে বিদ্যুতায়নের মধ্যদিয়ে দুর্গম চরের তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার কুপি বাতির আলো থেকে মুক্ত হয়ে চরাঞ্চলের মানুষগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবেন। এসময় সাংসদ পংকজ নাথ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে গড়ে ওঠা দুর্গম চরাঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা কেরোসিনের হারিকেন ও কুপির আলো ছাড়া কখনো বিদ্যুতের আলো পায়নি। এবার মাসকাটা নদীর তলদেশ দিয়ে সেই সব চরে বিদ্যুতায়ন কাজের উদ্বোধণ করা হয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে এসব সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের। যেখানে সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পুরো চরাঞ্চল। সেখানকার মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ অনেকটা স্বপ্নের মতো। জাঙ্গালিয়া এলাকার শিক্ষার্থী আবুল হোসেন ও রিনা খানম, চরগোপালপুর এলাকার শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহম্মেদ ও জুঁই আক্তার এবং শ্রীপুর এলাকার শিক্ষার্থী ইভা আক্তার ও আলামিন বলেন, এতোদিন কুপি বাতির আলোতেই পড়ালেখা করেছি। আমাদের এই দুর্গম চরে বিদ্যুৎ আসবে তাছিলো স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু জনকণ্ঠকে বলেন, উপজেলা সদর থেকে জাঙ্গালিয়া, চরগোপালপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়ন দুর্গম চর। মাসকাটা নদী পাড়ি দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ যাবে তা কখনো ভাবিনি। অবশেষে দুর্গম চরের ওই তিনটি ইউনিয়নে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হওয়ায় তিনটি ইউনিয়নের দশ হাজার পরিবারের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পল্লী বিদ্যুতের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্গম তিনটি ইউনিয়নকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে মাসকাটা নদীর তলদেশ দিয়ে ১৭শ’ মিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই পুরো কাজ শেষে বিদ্যুতায়নের মধ্যদিয়ে দুর্গম চরের তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা হবে। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো বিদ্যুৎ সংযোগের। আমি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় ও তার নির্দেশে আমি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যদিয়ে কুপি বাতির আলো থেকে মুক্ত হয়ে খুব শীঘ্রই দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবেন।
×