ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস ২০ বছর পর ফের চালু

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস ২০ বছর পর ফের চালু

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ/সংবাদদাতা, বেড়া, পাবনা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ॥ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ২০ বছর পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হলো। শনিবার বেলা ১১টার দিকে আরিচাঘাটে ফলক উন্মোচনের পর নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক ও বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ তাজুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে কাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান প্রমুখ। আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনকালে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ নৌরুট চালু হওয়ার ফলে যাত্রীসহ যানবাহনের শ্রমিকদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। প্রয়োজনে এ রুটে ফেরি আরও বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানান। এ সময় বেগম রোকেয়া নামের ফেরি দিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দেন তারা। উদ্বোধনের পর থেকেই ফেরি দিয়ে পারাপার শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরিঘাটে ভিড় করতে শুরু করেছে যানবাহন। দীর্ঘ প্রত্যাশা পূরণে উল্লাস ও আনন্দের কথা জানিয়েছেন জনসাধারণ ও ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা। কাজিরহাট-আরিচা নৌরুট পার হওয়ার জন্য আরিচা ৩নং ঘাটে ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করছেন হারুন আলী। তিনি বলেন, পাবনা-কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঘুরে ঢাকায় যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা বেশি সময় লাগে। আজ তার অবসান ঘটল। তাছাড়া তেল খরচ কমে আসবে। আরিচা কাজিরহাট নৌরুটে চালুর জন্য তিনমাস আগে থেকে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিংসহ মার্কিং প্রতিস্থাপন করে সকল কাজ সম্পন্ন করে বিআইডাব্লিউটিএ। শনিবার বেগম রোকেয়া, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও কেতকি নামে তিনটি ফেরি দিয়ে শুরু হলো ফেরি সার্ভিস। বিআইডব্লিউটিসির সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আরিচা হতে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট নৌরুটের তথা ফেরিঘাটের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এই নৌরুটে যাতায়াতের সময় লাগবে সোয়া একঘণ্টা। একটি বড় ও দুটি মাঝারি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হবে। এই নৌরুটে বড় বাসের ভাড়া ২০৬০ টাকা, ট্রাকের ভাড়া ১৪০০ টাকা, মাইক্রোবাসের ভাড়া ১০০০ টাকা, কার ও ছোটগাড়ির ভাড়া ৬৮০, মোটরসাইকেল ভাড়া ১০০ এবং জনপ্রতি যাত্রীর ভাড়া ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পদ্মা-যমুনা নদীতে নাব্য সঙ্কটের কারণে ২০০২ সালে আরিচা ফেরিঘাট পাটুরিয়াতে স্থানান্তর করা হয়। পুনরায় এই ফেরি চলাচল শুরু করতে গত বছরের নবেম্বর মাসে প্রায় ১৪ কোটি ব্যয়ে এই নৌরুটে ড্রেজিং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান নামের একটি ফেরি দিয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করা হয়। দীর্ঘদিন পরীক্ষার পর শনিবার সম্পূর্ণভাবে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। এই নৌরুটে এক সময় আরিচা-নগরবাড়ি ও আরিচা-দৌলতদিয়ার মাঝে ফেরি সার্ভিস চালু ছিল। নাব্য সঙ্কট ও দূরত্ব কমানোর জন্য আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাটুরিয়া- দৌলতদিয়ায় নতুন ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। চালু থাকে আরিচা- নগরবাড়ি ঘাট। নদী ভাঙ্গনের কারণে এক সময় নগরবাড়ি ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে চালু করা হয় আরিচা-নটাখোলা ফেরি সার্ভিস। নটাখোলা ঘাটও বন্ধ হয়ে গেলে চালু হয় আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস। পরবর্তীতে আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিসও বন্ধ হয়ে যায়। দুই বছর আগে পাটুরিয়া-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। দূরত্ব বেশি, সময় বেশি ও যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই রুটের ফেরি সার্ভিসও বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি ফেরি নিয়ে তৃতীয় বারের মতো আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস চালু করা হলো। প্রয়োজন হলে ফেরি সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ । এ নৌরুটি চালু হলে আরিচা ঘাটের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস আবার ফিরে আসবে। নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে অসংখ্য মানুষের। তবে সংশয় রয়েছে এই নৌরুটের ভবিষ্যত নিয়ে।
×