ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নবীন কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে আইজি

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে চাই পুলিশের দেশপ্রেম ও সাহসিকতা

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে চাই পুলিশের দেশপ্রেম ও সাহসিকতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে চাই পুলিশের পেশাগত জ্ঞান, দেশপ্রেম ও সাহসিকতা। বুধবার দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল থাকা। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সামাজিক সূচকেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালে আমাদের দেশ উন্নত দেশ হবে। তাই পুলিশ সদস্যদেরও উন্নত দেশের উপযোগী হতে হবে। ড. বেনজীর আহমেদ জানান, বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পুলিশ। আত্মতুষ্টি নয়, আমরা অনেক পথ এসেছি, যেতে হবে বহুদূর। পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি, সমাজের চাহিদা বেশি। জনগণ, সমাজ, মিডিয়া প্রতিনিয়ত পুলিশকে ওয়াচ করে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে। নিজের মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করতে হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান, করোনা মোকাবেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা না করেই পুলিশ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা জনগণের অফুরন্ত ভালবাসা পেয়েছি। জনগণকে ভালবাসলে তাদের ভালবাসাও পাওয়া যায়। ড. বেনজীর আহমেদ জানান, দেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে রোল মডেল। দেশে জঙ্গীবাদ দমনে আমরা জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি। যার ফলে জঙ্গীবাদ দমনে আমরা সফল হয়েছি। আমরা জনগণের সঙ্গে অসদাচরণ করা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। পেশিশক্তি নয়, ব্যবহার করতে হবে আইনী সক্ষমতা। দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান, পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। পুলিশ বাহিনীতে এসে কারো অবৈধ উপায়ে অর্থ আয়ের ইচ্ছা থাকলে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান। জনগণের কল্যাণে কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে পুলিশের। পুলিশ হতে পারে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, সোশ্যাল লিডার। তিনি বলেন, একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হতে হলে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। গুরুত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিগণসহ অন্য উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচে ৯৭ জন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ জন পুরুষ এবং ১২ জন নারী কর্মকর্তা। অপরদিকে একইদিন দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের (সিপিএইচ) নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি জানান, সন্ত্রাসীরা গুলি করলে সেটা প্রতিহত করতেই সরকার পুলিশকে অস্ত্র দিয়েছে। প্রয়োজনের নিরিখে জীবন রক্ষার জন্যই সরকারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রায় পাঁচ মাস পর মঙ্গলবার কক্সবাজারে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বন্দুকযুদ্ধ হলে কি আমাদের লোকজন বন্দুক ফেলে পালিয়ে চলে আসবে? জকির ডাকাত, ভয়াবহ ডাকাত, যান কক্সবাজারে গিয়ে খবর নেন। গত তিন বছরে তার কাছ থেকে কমপক্ষে দেড়শ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার যখন গুলিতে সে মারা গেছে তখনও তার কাছ থেকে নয়টা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যখন এ ধরনের কোন বিপজ্জনক আর্মস গ্যাং গুলি করবে, তখন কি আমরা শহীদ হয়ে চলে আসব? যেখানে আর্মস গ্যাং আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করবে সেখানে আমরা প্রয়োজনের নিরিখে জীবন রক্ষার জন্য সরকারী অস্ত্র ব্যবহার করব। সরকারী অস্ত্র দেয়া হয়েছে সেটাকে প্রতিহত করবার জন্য। সরকার অস্ত্র দিয়েছে লাঠি হিসেবে ব্যবহারের জন্য না। লাঠি একরকম আর লিথেল উইপন আরেকরকম। সরকার যদি শুধু লাঠি দেয়, আমরা লাঠিই ব্যবহার করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার মানুষ জানে, জকির ডাকাত কী জিনিস, তার হাতে কত লোক অপহৃত হয়েছেন আর কতজন মারা গেছেন। তাই যেটা হয়েছে, সেটা আমি মনে করি প্রয়োজন হলে হবে, না হলে হবে না। এখানে ঘোষণা দিয়ে চালু করা বা বন্ধ করার কোন বিষয় নেই। এর আগে পুলিশ হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান, গত বছরে মার্চে মহামারী করোনার আবির্ভাব ঘটে, আর এতে সবচেয়ে বড় ক্যাজুয়ালিটি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। করোনায় প্রায় ৮৩ জন সদস্য শাহাদাত বরণ করছেন, সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে ২১ হাজার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল একটি জেনারেল হাসপাতাল ছিল, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এটিকে দ্রুত কোভিড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করি। নতুন ভবনের ফলে এ হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা খুব চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
×