ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রথিতযশা গবেষক, সাংবাদিক, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মাকসুদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। সৈয়দ নাসিফ মাকসুদ বলেন, তার বাবা বাসায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। ওই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি আগেই মারা গেছেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। শৈশব থেকে আবুল মকসুদ দেশী বিদেশী বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। সৈয়দ আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন। এর আগে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার কবিতার বই বিকেলবেলা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। আবুল মকসুদের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ-এ। তাদের দুই সন্তান। মেয়ে জিহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে ব্যাংকে চাকরি করছেন। ছেলে নাসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স করে দুই বছর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হিসেবে চাকরি করছেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন নেতার শোক ॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পৃথক শোকবার্তায় তারা সৈয়দ আবুল মকসুদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক ও উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোকবার্তায় নেতারা বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ সহজাত লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। জীবনের সূক্ষাতিসূক্ষ নানাবিধ অনুষঙ্গের অন্বেষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। তারা বলেন, তিনি শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতিকেই লালন করেননি, অধিকন্তু পরম মমতায় ধারণ করেছেন পরিবেশ-প্রতিবেশকে। একটি বাসযোগ্য ধরিত্রী গড়ে তুলতে তার উচ্চকিত ভূমিকা অনুপ্রেরণা জাগানিয়া। তার কলম থেমে যাওয়া জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে তিনি প্রজন্মের আলোর দিশারী হয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
×